ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

রসের খোঁজে একদিন

তানিম তানভীর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪  
রসের খোঁজে একদিন

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন নিঝুম রাত। পৌষের কনকনে হিমেল হাওয়ায় আটোসাটো সব প্রাণী। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সকলে। হিমায়িত রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন শহর, নগরের মানুষগুলো নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে শীতের চাদরে।

তখনই মনের কোণে উঁকি দেয় মনোরম সকালে গাঁয়ের মেঠো পথে পথিকের হেঁটে চলার কথা। ভাবতে থাকি ঝিরিঝিরি শিশিরের ছোঁয়ায় খেঁজুরের রস পান করলে কেমন হয়! 

যেই ভাবা সেই কাজ। মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত হয়, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘নোফেল ছাত্রকল্যাণ ফোরাম’ এর আমরা কয়েকজন ক্যাম্পাস সংলগ্ন ত্রিবেণী এলাকায় যাব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পকেট গেইট থেকে ভোর সাড়ে ৬টায় একটি ভ্যানে আট নোফেলিয়ানের যাত্রা শুরু হয়। পথে একরের পর একর জুড়ে হলুদ সরিষার মৃদুমন্দ ঘ্রাণে মাতোয়ারা সবার মন প্রাণ। মন খুলে আঞ্চলিক গানের মহড়া চলতে থাকে ভ্যানেই।

এসব গানের মধ্যে ‘ওরে ভাইরে ভাই, কাইলগা রাইত খোয়াবে দেখছি মন্ত্রী হইছি আ-ই’, ‘দুবাই গেছে আঙ্গ বাড়ির মোহাম্মদ আলী, আলী এক মায়ের এক হুত মরি গেলে টুক্কুরুত’, ‘আহারে ও কুলসুম কইত্যুন আইলো-ডুবাইযালা কইল্যোরে এ জুলুম’ অন্যতম।

আমাদের সরব উপস্থিতির জানান দিতে একজন স্লোগান ধরলো- ‘তুমি কে আমি কে, নোফেলিয়ান-নোফেলিয়ান’। এরই মাঝে একজন কোরামের ভারত্বের জানান দিতে বলা শুরু  করে ‘নোয়াখালী-নোয়াখালী’।

ঘন কুয়াশায় স্নান করে চুপসে আছে প্রকৃতির সবুজ পল্লব। সুবাসিত ঘ্রাণে যেন প্রাণ কেড়ে নেয়। দূর্বাঘাসে সোনালি মিষ্টি রৌদ্দুর আর ঝরা পাতার নৃত্যে প্রকৃতির এক অপূর্ব সাজ দেখতে দেখতে অবশেষে পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায়।

শীতের মৌসুমের সঙ্গে খেঁজুর রসের দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের মেলবন্ধনে আমাদের মতো শতাধিক শিক্ষার্থীও এসেছে খেজুর রস পান করতে। কুয়াশার আবছায়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে কেউ রস পানে ব্যস্ত, কেউ ছবি তোলায়, কেউবা আবার ভিডিও ধারণের অপেক্ষায়। তবে সবারই উদ্দেশ্য খেজুর রস পান।

সুমিষ্ট রস পান করার পর অন্যদের তৃপ্ত চাঁদমুখখানা দেখে আমার আর তর সইছে না। গাছি মামাকে বললাম, চট করে এক গ্লাস দেন তো। কিন্তু মামা বললেন, ‘কাপের সংকট।’ এরই ফাঁকে কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করি।

খেজুর রস পানের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে একজন বলেন, “রস খাইতে খুব বালা লাগছে! এর সাথে ছবি তোলার পোসগুলা (ভঙ্গি) দারুণ ছিল। পোসগুলো দেখতে ভালো, তুলতে ভালো, পোস্ট করতেও ভালো।”

পর্যায়ক্রমে সময় আসে আমারও। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেই কাঙ্ক্ষিত রস পেয়ে এক নিঃশ্বাসে পান করে রাতের ভাবনাকে সফল করি। এবার যাবার পালা।

রস পানের পর এক বন্ধুর মুখে কথার খই ফুটতে শুরু করে। ভ্যানে চড়েই সে শুরু করে দেয় ভাষণ, গান। পুরো যাত্রায় আমাদের আনন্দে রেখেছে সে।  চলতে চলতে শেখপাড়া বাজারে এসে এককাপ কুমকুম দুধ-চা পান করে নিজেকে আরেকটু চাঙ্গা করে নেই। 

মন থেকে এতটুকুই আশা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের (নোফেল) এ বন্ধন অটুট থাক যুগ-যুগান্তর।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
 

ঢাকা/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়