ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদ হত্যার বিচার দাবি

ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪  
বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদ হত্যার বিচার দাবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহতাসিম মাসুদ হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বুয়েটের মূল ফটকের সামনে শহীদ মিনারের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর ৩০০ ফিট রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় বুয়েটের ম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহতাসিম মাসুদ, অমিত সাহা ও মেহেদি হাসান খাঁন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই মরলো কেন, বিচার চাই বিচার চাই’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই জবাব দাও’, ‘মদ্যপ চালকের শাস্তি চাই, আমার ভাইয়ের ন্যায়বিচার চাই’, ‘দুর্ঘটনা নয়, নৃশংস হত্যাকাণ্ড’, ‘মদ খেয়ে গাড়ি চালান, আর কত নিবেন জান’, ‘ক্ষমতার কোন ঠাঁয় নাই, মাসুদ হত্যার বিচার চাই’, ‘জাস্টিস ডিলেয়েড, জাস্টিস ডিনায়েড’, ‘ন্যায় নাকি ক্ষমতা, ন্যায়বিচার ন্যায়বিচার’, ‘সড়কে লাশের মিছিল আর কত’, ‘হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিবেন না’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাসুদ, অমিত ও মেহেদিকে অচেতন অবস্থায় পায়। ফায়ার সার্ভিসের সাহায্যে তারা আহতদের দ্রুত রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

একই সময়ে বুয়েটের অন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ও কুর্মিটোলা হাসপাতালে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখেন, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেট কারের চালক ও তার সহযাত্রীদের প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীরা ঘিরে রেখেছেন। সেখান থেকে তারা জানতে পারেন, অমিত, মাসুদ ও মেহেদিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট মোড়ে ডিউটিরত পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত করতে দাঁড় করায়। এ সময় পেছন থেকে ওই প্রাইভেটকারটি বেপরোয়া গতিতে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলসহ তিনজনকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই তিনজন সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ছিটকে পড়ে।

গ্রাইভেটকারের চালকের আসনে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে মুবিন আল মামুন ওরফে সাদমান। তার সঙ্গে ছিলেন মিরাজুল করিম এবং আসিফ চৌধুরী। শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনকেও দেখতে পান। পরে তারা প্রাইভেটকার পর্যবেক্ষণ করে নেশাদ্রব্যের উপস্থিতি পান।

ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে চালকসহ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং সেখান থেকে রূপগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে থানায় গেলে কর্তব্যরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে থাকেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় বুয়েট থেকে আরও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা গেলেও ওসি মামলা না নিতে গড়িমসি করতে থাকেন। এ সময় চালক মুবিন আল মামুন ওরফে সাদমানে পরিবারের সদস্যরা তাদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে মামলা থেকে দূরে থাকতে বলেন এবং নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।

শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে মামলার নেওয়ার পর নিহত মাসুদের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। একইসঙ্গে অভিযুক্তদের ডোপ টেস্টের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) পাঠানো হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, এটা কোন দুর্ঘটনা নয়, নির্মম হত্যাকাণ্ড। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অভিযুক্তদের আইনজীবী গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিছু সংবাদমাধ্যমও এ হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচার করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও দ্রুত সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এ সময় তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- যেকোন মূল্যে এ হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে; নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে; তদন্ত কার্যক্রমে বাধা প্রদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে; সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি বুয়েটের মূল ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ৬নং গেট হয়ে মূল ফটকে এসে শেষ হয়।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়