‘শীতকালীন ছুটি শেষে বাতিল হবে ইবির সান্ধ্য আইন’
ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা সংক্রান্ত ঘোষিত নির্দেশনা শীতকালীন ছুটি শেষে বাতিল হবে বলে জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ এবিএম জাকির হোসেন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ১৪০তম প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সাধারণ সভায় ছাত্রদের হলগুলোতে রাত ১১টার মধ্যে প্রবেশের আদেশ দেওয়া হয়। আর ছাত্রীদের মাগরিবের আজান হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে হলে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়। এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি হলগুলোতে নোটিশ আকারে টানানো হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এরপর থেকে বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। কোনো কোনো সংগঠন বলছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে সময় নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্ররা জানান, ক্যাম্পাসে ছেলেদের জন্য পাঁচটি ও মেয়েদের জন্য তিনটি হল রয়েছে। তাতে আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা রয়েছে। ছেলেদের হলে প্রবেশের নির্ধারিত তেমন কোনো সময় নেই।
ছাত্রীরা জানান, মেয়েদের হলে সান্ধ্য আইন (মাগরিবের আজানের ১৫ মিনিটের মধ্যে) ছিল। তবে তারপরও অনেকে সন্ধ্যা ছয়টা বা সাতটা পর্যন্তও হলে প্রবেশ করতে পারতেন। কিন্তু এবার ছেলেদের সময় বেঁধে দেওয়ার পর সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “কোনো ধরনের শৃঙ্খলা বা নীতির নামে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা হরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা, মতপ্রকাশ এবং নিজেদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করতে পারে, সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করা উচিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদ্য ঘোষিত সান্ধ্য আইন শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে এবং একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।”
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “এ নির্দেশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা ও জীবনযাত্রা সীমাবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অবশ্যই সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। বিষয়টি প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলকে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া আবাসিক হলগুলো ক্যান্টিন, চাহিদা মোতাবেক মেডিসিন (ওষুধ), পর্যাপ্ত রিডিংরুম (পাঠকক্ষ) নিশ্চিত করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জরুরি অবস্থায় প্রবেশ-প্রস্থানের রোডম্যাপ না দেওয়া উচিত বলে মনে করি।”
এদিকে, আবাসিক হল সংশ্লিষ্ট নতুন যেকোনো সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়াসহ পাঁচ দাবিতে গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ড. শেখ এবিএম জাকির হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইবি শাখা ছাত্রশিবির।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী।
তাদের দাবিগুলো হলো- আবাসিক হলে নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা শিক্ষার্থীদের সাথে পরামর্শ করতে হবে; হলের অভ্যন্তরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে; হলের অভ্যন্তরে বিশেষ করে ছাত্রীহলগুলোতে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে; ছাত্রীদের জন্য মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট চালু করা; আবাসিক হলগুলোতে ২৪ ঘণ্টা আবাসিক শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ এবিএম জাকির হোসেন বলেন, “হলে প্রবেশের এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। শীতকালীন ছুটিতে হলগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই কম। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, বন্ধের এই সময়ে হলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। কারণ এখন সারাদেশে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। শীতকালীন ছুটি শেষে এই নিয়ম বাতিল হবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী