ঢাকা     বুধবার   ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ১৮ ১৪৩১

ঘৃণাস্তম্ভের গ্রাফিতি মুছে ঢাবি প্রশাসনের দুঃখপ্রকাশ, নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কারের ঘোষণা

ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২১:১৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ঘৃণাস্তম্ভের গ্রাফিতি মুছে ঢাবি প্রশাসনের দুঃখপ্রকাশ, নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কারের ঘোষণা

প্রথম ছবিটি মুছে ফেলায় দ্বিতীয়টি আঁকা হয়

রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতির একাংশ মুছে ফেলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর দপ্তর।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দপ্তরটি থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এর আগে, শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে টিএসসি সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে শেখ মুজিব ও হাসিনার ব্যঙ্গাত্মক গ্রাফিতি ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ ক্রেন নিয়ে মুছতে আসে সিটি করপোরেশনের কিছু লোক। হাসিনার গ্রাফিতির মাথা পর্যন্ত মুছে ফেললেও মুজিবের পুরোটাই মুছে ফেলা হয়েছে। হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা অবস্থায় শিক্ষার্থীরা এসে বাধা দিলে তারা এটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, শেখ হাসিনার গ্রাফিতিটা ছিল মূলত ঘৃণাস্তম্ভ। এটি জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি। আমরা এটি দেখে প্রক্টরকে কল করলে প্রক্টর এসে জানান, তাকে গোয়েন্দা সংস্থা কল করেছেন শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার ছবি মুছে দেওয়ার জন্য। পরে প্রক্টর স্যার অ্যাস্টেট অফিসকে জানালে সিটি করপোরেশন ও মেট্রো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এটি মুছে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাশের ‘ঘৃণাস্তম্ভ’র সামনে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়েছে জেনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার ফেসবুক পেজে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ নামক এ গ্রাফিতিতে পুনরায় শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রাফিতি আঁকার কাজটি করেন ছাত্র ইউনিয়নের চারুকলা অনুষদ শাখার সদস্য মৃধা রাইয়ান ও ঋষি।

ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঢাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিষয়টি পুরোপুরি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখানে যেভাবে চাইবেই সেভাবেই গ্রাফিতি থাকবে। আমরা অতি দ্রুত এই দুটি মেট্রোর পিলারকে ফ্যাসিবাদ ঘৃণাস্তম্ভ ঘোষণা করে দেব।”

তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে যখন বিভিন্ন সংগঠন বা দল বা শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রোগ্রাম করে। সেগুলোর ছবি ও বিস্তারিত সংগ্রহ করে এনএসআই ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে পাঠায়। সেখানে এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায়, ঢাবিতে এখনও শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো যে প্রতিবাদের স্মৃতি হিসেবে এখানে রয়েছে, তা বোঝা যায়নি। সে জন্য এগুলো মুছতে বলা হয়েছিল।”

রবিবার দুঃখপ্রকাশ করে দেওয়া প্রক্টর অফিসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আমরা অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, শনিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলের দুটি পিলারে থাকা শেখ মুজিব ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক গ্রাফিতি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। জুলাই আন্দোলনে এ দুটি গ্রাফিতি বিপ্লব, প্রতিরোধ এবং ফ্যাসিবাদ ধ্বংসের প্রতিনিধিত্ব করে। এ স্মৃতিকে তাজা রাখা এবং প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

একে প্রক্টরিয়াল টিমের ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুল উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরো সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি।

প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে গত রাতেই শিক্ষার্থীরা মুছে ফেলা গ্রাফিতি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এঁকেছেন। এই স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার এই ঘৃণাকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

অপরদিকে, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আঁকা দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের স্মৃতি বিজড়িত দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ অনুযায়ী, দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিগুলো কোনোভাবেই মুছে ফেলা বা এর কোনোরূপ ক্ষতিসাধন করা যাবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রশাসনিক আদেশ অমান্য করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখন জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৬ দিন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গ্রাফিতি অঙ্কন ও দেয়াল লিখন করা হয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গণহত্যার নিদর্শন, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের স্মৃতির নিদর্শনস্বরূপ দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করা করছি।

কোনো কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতিগুলো নষ্ট হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়