ভেঙে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সাদা দল
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একাংশের পাল্টা কমিটির ঘোষণা আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা ৩৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একাংশের পাল্টা কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে এ বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে।
এর আগে, দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে সাদা দলের নতুন কমিটি প্রস্তাব করা হয়।
তবে ড. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা দলের একাংশ বর্তমান প্রস্তাবিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে। ড. আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, তার নেতৃত্বে সাদা দলের ৫৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত সাদা দলে মোট ১২১ জন শিক্ষক ছিলেন।
তারা ৬ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ ও ৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। নবগঠিত উপদেষ্টা পরিষদে ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেলিম রেজা, প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এনামুল হক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান নিয়াজী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক উকিল আহমেদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ইমরান তায়েব এবং এস এম মোস্তফা আল মামুন রয়েছেন।
আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন অধ্যাপক ডক্টর আমিনুল ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মুজাদ্দেদী আলফেছানী ও অধ্যাপক ড. মেজবাউল ইসলাম।
তাদের দাবি, বর্তমান সাদা দলের একটি ক্ষুদ্র সুবিধাবাদী বলয় (সিন্ডিকেট/কোটারী) কর্তৃক আহ্বায়ক হিসেবে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবে অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম সরকার এর নাম প্রস্তাবিত হয়েছে। অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য, ইউট্যাবের মহাসচিব, জেডআরএফ এর ডিরেক্টর এডমিনসহ বিভিন্ন দলীয় পদে আসীন।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারা অনুসারে ‘এক নেতা এক পদ' বাস্তবায়নেই সাদা দলের পেশাজীবিরা দেখতে চায়। বিএনপির বহু পদে আসীন মোর্শেদ হাসান খান সাদা দলের বিশেষ সিন্ডিকেট/কোটারীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাদা দলের জাতীয়তাবাদী চরিত্র ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবেন এবং জাতির সামনে জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ করবেন।
এছাড়াও তারা সাদা দলে বর্তমান প্রস্তাবিত নেতৃত্ব অগ্রহণযোগ্য হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে গঠনতন্ত্র বিরোধী বিশেষ বলয় কমিটি, স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক মনোভাব, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলনের ব্যর্থতা, দিশারিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা, দলে অবৈধ প্রভাব বিস্তার, সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আস্থা হারানো, নারী নেতৃত্বের প্রতি বৈষম্য, ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অভিযোগ উত্থাপন করেন।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের পথ প্রদর্শক হিসেবে পুনর্গঠিত হয়েছে সাদা দল। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা, রাষ্ট্র পরিচালনায় বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা প্রদান করে জাতির আশা-আকাঙ্খা প্রতিফলিত কর, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ উন্নত সমৃদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে আরও গতিশীল ও সুদৃঢ় করা, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা, গবেষণা ও একাডেমিক প্রশাসনে গঠনমূলক মতামত ও সহায়তা প্রদান করা পূর্নগঠিত সাদা দলের লক্ষ্য।”
অযোগ্য নেতৃত্ব ও বিশেষ সিন্ডিকেটের প্রভাবের সাদা দল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দলের নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে এবং বারবার দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। ফরে সাদা দলের পুর্নগঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, গণতন্ত্র, ন্যায়নীতি এবং শিক্ষক সমাজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্ছার শিক্ষকবৃন্দ আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং পুর্নগঠিত এই সাদা দল হবে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক এবং শিক্ষার উৎকর্ষে নিবেদিত।”
তিনি আরও বলেন, “পুর্নগঠিত সাদা দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একটি স্বতন্ত্র প্যাটফর্ম। কেবলমাত্র জাতীয়তাবাদী চিন্তার ধারক- বাহক সদস্যরাই এতে যুক্ত থাকবেন। দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও আপসকামিতার বিরুদ্ধে এটি এক কার্যকর প্রতিবাদ।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী