ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

গরম খবরে বারবার শিরোনাম সোহরাওয়ার্দী কলেজ

ইয়াছিন মোল্লা, সোহরাওয়ার্দী কলেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২১:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
গরম খবরে বারবার শিরোনাম সোহরাওয়ার্দী কলেজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের অন্যতম সোহরাওয়ার্দী কলেজ। পুরান ঢাকার অন্যতম প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠটি বছর জুড়ে নানা ঘটনায় আলোচিত ছিল। এমনকি একটি বেসরকারি কলেজের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় কলেজ শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই এ কলেজটি জুলাই অভ্যুত্থানে বড় ভূমিকা পালন করে।

ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা
১৮ বছর পর ১১ ফেব্রুয়ারি ১৬৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রদল। এতে সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্ব পান জসিম উদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দ্বায়িত্ব পান রবিউল ইসলাম রুবেল। এর আগে ১৭ বছর পর ২০২৩ সালে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীরা
১ জুলাই সৃষ্টি হওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেন। কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজন সমন্বয়ক হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পতনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।

আরো পড়ুন:

গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী। হাসান মেহেদী সোহরাওয়ার্দী কলেজের ডিগ্রির সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ তিন মাস পর গত ১৪ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এ অবস্থায় তিনি দুই থেকে তিন ঘণ্টা রাস্তায় পড়েছিলেন।

অধ্যক্ষ পদে রদবদল
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের পট পরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর পদত্যাগ করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা ও কলেজের শিক্ষার মান এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন না করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ও অপরাজনীতি বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পদত্যাগ করেন তিনি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়কে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বন্যার্তদের জন্য শিক্ষার্থীরা
গত ২৭ আগস্ট দেশের বৃহত্তর কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীর আকস্মিক বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান শিক্ষার্থীরা। গত ২৬ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বন্যার্তদের জন্য শুকনা খাবার, শিশুর খাবার, মোমবাতি, খাবার স্যালাইন, নাপা ট্যাবলেট, নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন, পুরাতন জামা কাপড় নিয়ে যাত্রা করে দুইটি মিনি ট্রাক।

কাওয়ালি সন্ধ্যা
গত ৮ অক্টোবর ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে কাওয়ালী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গজল, হামদ, কাওয়ালি সংগীত, দেশাত্মবোধক গান ও লালন-বাউল গান পরিবেশন করেন আগত শিল্পীরা।

নবীন বরণ
গত ২১ অক্টোবর কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিন একযোগে কলেজের ১৭টি বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

দুই কলেজের সংঘর্ষ
গত ২৪ নভেম্বর ভুল চিকিৎসায় সহপাঠীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সুপার সানডে ঘোষণা দিয়ে রাজধানীর অন্তত ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল, কবি নজরুল কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলমান ছিল। আকস্মিক এই আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রতিটি বিভাগ, অফিসরুম, বিভাগীয় প্রধানের কার্যালয় ও গবেষণাগারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। টাকার হিসেবে এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো।

পরদিন ২৫ নভেম্বর কলেজে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে মেগা মানডে ঘোষণা দেয় কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। হামলা ও ভাঙচুরের জবাবে তারাও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। এতে আবারও ড. মাহবুবর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের হামলায় আহত হন কবি নজরুল এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ক্ষতি মেরামত করে গত ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ফেরে কলেজটি।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়