ঢাকা     শনিবার   ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

শর্ত পূরণ ছাড়াই কুবির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ

কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ১ জানুয়ারি ২০২৫  
শর্ত পূরণ ছাড়াই কুবির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ

প্রয়োজনীয় একাডেমিক ফলাফল না থাকা সত্ত্বেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন মো. মোবারক হোসাইন নামে এক প্রার্থী।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০০ থাকার কথা থাকলেও তার প্রাপ্ত জিপিএ ৩.৯০, যা নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে কম।

গত অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে। যেখানে মো. মোবারক হোসাইন ২০০৩ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর মধ্যে জিপিএ-৩.৯০ পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে যেকোন একটি শর্ত শিথিলের বিষয় উল্লেখ ছিল। তবে এ বছরের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে শিথিলতার কথা উল্লেখ নেই।

নিয়ম অনুযায়ী যে বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেই বিভাগ কর্তৃক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক মিলে একটি প্ল্যানিং বা বাছাই কমিটি গঠিত হবে। সেই কমিটি প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদনকারী প্রার্থীদের যোগ্যতাসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করবেন।

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে এবারের প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্ল্যানিং বা বাছাই কমিটিতে রয়েছেন বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান, ড. মুহম্মদ আসহান উল্যাহ, সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুব আলম, ড. জিএম আজমল আলী কাওসার এবং মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম।

এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, “আমরা প্ল্যানিং কমিটি বসে মিটিং করেছি। এটি আসলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। এখন এটি প্রশাসন দেখবে।”

প্ল্যানিং কমিটিতে থাকা ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ আসহান উল্যাহ বলেন, “এটা তো চেয়ারম্যান বা রেজিস্ট্রার বলতে পারবে। ক্রাইটেরিয়া ব্যতীত এখানে আসলে কাউকেই নেওয়া যাবে না। এখন দেখার বিষয়, এটি কি প্রিন্টিংয়ে ভুল হয়েছে, না-কি অন্যকিছু।”

তিনি বলেন, “ক্রাইটেরিয়া সম্পূর্ণ না হলে প্ল্যানিং কমিটিও কাউকে নিতে পারে না। ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে এসএসসি, এইচএসসিতে জিপিএ ৪। সেখানে এর নিচে আসবে কিভাবে? এটা কারো উপরই দোষারোপ করে লাভ নেই। হায়ার অথোরিটি ইচ্ছে করলে এটা বাতিল করতে পারে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, “সে পরীক্ষাতে বসবে কি বসবে না এটা আমার এখতিয়ারে নেই। যখন সিলেকশন বোর্ডে আসবে, সিলেকশন বোর্ডের মেম্বাররা অ্যানালাইসিস করবে। যদি সে আসে সিলেকশন বোর্ড সবকিছু দেখে-শুনে সিদ্ধান্ত নিবে।”

যোগ্যতা না থাকলে কীভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভুলে একজনের কাছে কার্ড চলে গেছে। তার কার্ডটা তো আমি রোহিত করতে পারি না। বাতিল করার জন্য তিনটা ধাপ রয়েছে। বাছাই বোর্ড, প্ল্যানিং ও সিন্ডিকেট। সে যেকোন একটা ধাপে আটকে যেতে পারে। তাকে আটকানোর আইন আমার হাতে নাই।”

তিনি আরও বলেন, “যারা ভুল করেছেন, তাদের আমি কোয়ারি করতে পারি। ওই প্রার্থীকে আমরা কোয়ারি করতে পারি না।”

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এটি আমাদের সিলেকশন বোর্ড দেখবে। বোর্ড যদি দেখে তিনি (প্রার্থী) কোয়ালিফাই করেন না, তাহলে বাদ যাবে। প্রত্যেক সময়ই আমরা বোর্ডে চেক করি। তবে প্ল্যানিং কমিটিকে অবশ্যই আমরা শোকজ করবো।”

এর আগে, ২০১৯ সালে মোবারক হোসাইনের পিএইচডি থিসিসে আপত্তিকর শব্দের ব্যবহার, উইকিপিডিয়া থেকে সরাসরি কপি-পেস্ট করা এবং ইংরেজি ভুল শব্দ ও বাক্যের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল।

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়