মাদকসহ ঢাবি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আটক
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
থার্টি ফার্স্ট নাইটে (ইংরেজি নববর্ষ) পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রাতভর অভিযান চালান প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষার্থীকে মদ্যপ অবস্থায় আটক করেন তারা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গভীর জঙ্গলে বারবিকিউ পার্টি করতে দেখা যায়।
আটককৃতদের মধ্যে তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি), উত্তরা ইউনিভার্সিটি ও প্রাইম নার্সিং কলেজের দুইজন এবং চারজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন ছেলে শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন নামক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের প্রিয়ন্তি নাগ, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী থোয়াইনু প্রু ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের খেংচেং ফু মারমা এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটির আফরিন আশা ও প্রাইম নার্সিং কলেজের মাসুই মারমা।
এছাড়া আটক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেন, নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হ্রই মুইং স্যাং ও কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ৫১তম ব্যাচের মো. শিপন হোসেন ও সতীর্থ বিশ্বাস বাঁধন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি টিভি ফুটেজে তাদের গতিবিধি অনুসরণ করে সুন্দরবন নামক স্থান থেকে দেশি ও বিদেশি দুই বোতল মদসহ তাদের আটক করেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। এ সময় তারা দুইটি জায়গায় গোল হয়ে বসে মদ পান করছিলেন। তবে এদের মধ্যে একটি গ্রুপ মদ পানের কথা স্বীকার করলেও অপর গ্রুপ শুধু মদ বহনের কথা স্বীকার করেন।
আটক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাবি শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণে বহিরাগত শিক্ষার্থীরা মদ নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এরপর নিরিবিলি জায়গায় (সুন্দরবন) আড্ডা জমিয়ে মদ পান করেন তারা।
মদ পানের কথা স্বীকার করে আটক তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. শিপন হোসেন বলেন, “আমি ও আমার ফ্রেন্ডরা মিলে নতুন বছর উপলক্ষে আগুন জ্বালিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের ধরে নিয়ে আসে। যখন ধরা হয় তখন আমাদের সঙ্গে মদ ছিল। আমাদের সঙ্গে যাদের আটক করা হয়েছে তারা আমাদের অতিথি। তাদের বাসা নবীনগর।”
অভিযানের বিষয়ে জাবি প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। আমরা ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটে ক্যাম্পাসের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার মধ্যেই স্ব-স্ব হলে ফেরার নোটিশ দিয়েছিলাম। এছাড়া আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “নোটিশে উল্লেখ করা এসব বিষয় তদারকি করতেই আজ রাতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করি এবং শিক্ষার্থীদের বাইরে কোথাও পেলে তাদের হলে ফিরে যেতে বলি। আমরা সুন্দরবন এলাকায় গেলে সেখানে শিক্ষার্থীদের দুটি গ্রুপকে আমরা মাদক সেবনরত অবস্থায় ধরতে সক্ষম হই।”
আটকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা সবার পরিচয় সংগ্রহ করেছি এবং সবার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছি ও সব ধরনের প্রমাণ জোগাড় করেছি। এখন আমরা এসব বিষয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে প্রমাণ সাপেক্ষে খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
এদিকে এ অভিযান পরিচালনা শেষে রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের এক্সটেনশনের গভীর জঙ্গলে বারবিকিউ পার্টি করতে দেখা যায় চারুকলা ও নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এ সময় তারা আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তবে তাদের আড্ডার স্থানে ওয়ানটাইম গ্লাস (খালি) পাওয়া যায় এবং তাতে মদের গন্ধ ছিল। পরে প্রক্টর তাদের দ্রুত ঐ স্থান ছেড়ে হলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনাগুলো শুধু কাগজেই থাকত। কখনই তা বাস্তবায়নে প্রশাসনের সদিচ্ছা দেখা যায়নি। এ বছর মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এমন অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
গত সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৩১ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব হলে রাত ১০টার মাঝেই ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া বহিরাগত সব অতিথিদের ক্যাপাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী