ঢাবিতে মাদকসহ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আটক
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শিমুল কুম্ভকারসহ তিন শিক্ষার্থীকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ গেট থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানা গেছে।
আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শিমুল কুমার পাল (শিমুল কুম্ভকার), ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাইয়ান, কারুশিল্প বিভাগের মো. আব্দুল আহাদ।
জানা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং জরুরি সেবা ছাড়া অন্য যান চলাচল সীমিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনজন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ দিয়ে রিকশাযোগে করে প্রবেশ করছিলেন। সেখানে দায়িত্বে থাকা প্রক্টরিয়াল টিম ও বিএনসিসির সদস্য তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় বিএনসিসির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীদের ‘উদ্যান থেকে পোলাপান এনে শুইয়ে দিব’ বলে হুমকি দেন তারা। উদ্যানের কথা বলার পর তাদের তিনজনের আচরণ সন্দেহজনক হলে সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ ব্যাগ তল্লাশি করে মাদকদ্রব্য পায়। পরে তাদের আটক করে নিউমার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে খবর পেয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষসহ আরো কয়েকজন থানায় প্রবেশ করেন বলে জানা গেছে।
উপস্থিত বিএনসিসির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, অধ্যাপক মামুন থানায় প্রবেশের পর তাদের বলেন 'সে তো ছাত্র ইউনিয়নের বড় নেতা। এটা পলিটিকাল ইস্যু, লেট মি হেন্ডেল দিস। তোমরা এ ঘটনা আর কাউকে বলবে না। তোমাদের মধ্যেই যেন থাকে।’ এরপর তাদের বের করে দেওয়া হয় এবং ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন প্রবেশ করেন। এ সময় মাদকদ্রব্য পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানান বিএনসিসির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা।
বিএনসিসির সদস্য আসিফ বলেন, “যখন তাদের ব্যাগ থেকে পুলিশ মাদকদ্রব্য বের করে, সেটি সবুজ পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় সাদা কালারের দুটি বোতল ছিল।”
নিউমার্কেট থানায় শাহবাগ থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আটককৃতদের সঙ্গে কালো পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় দুটি হান্টার বিয়ার পাওয়া যায়।
সলিমুল্লাহ মুসলিমের হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, “একজন শিক্ষার্থী আমাকে কল দিয়ে বলল, তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে, প্রক্টরকে তারা কল করে পাচ্ছে না। আন্দোলনের কারণে নানা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তারা আন্দোলনেও সক্রিয় জড়িত। আমিও যেতে যেতে প্রক্টরিয়াল টিমকে কল করে পাচ্ছিলাম না। থানায় গিয়ে শুনি থার্টি ফাস্ট নাইট ইস্যু। তিন-চার মিনিট অবস্থানের পর সহকারি প্রক্টর রফিকুল ইসলাম থানায় আসেন। বিষয়টি তাকে হ্যান্ড-ওভার করে চলে আসি।”
ছাত্র ইউনিয়ন ও মাদক পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা পুলিশকে জিজ্ঞেস করো, তারা বলতে পারবে। এখানে ছাত্র ইউনিয়ন, বিএনসিসি কোনো ইস্যু না। আমি বলেছি, যারা এটার সঙ্গে যুক্ত, তারা থেকে বাকিরা বের হয়ে যাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আমাকে কল করেছে, আমার মনে হয়েছে যাওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন শিক্ষার্থী সে শিবির-ছাত্রদল-ছাত্রলীগ হোক, আমাকে কল করলে আমি যাব।”
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর, “গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে তিনজনকে মাদকদ্রব্যসহ থানায় নিয়ে আসা হয়। তারা সকাল পর্যন্ত ছিল। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও চারুকলা অনুষদের ডিন এসেছিলেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেবে এ আশ্বাসে তাদের ডিন স্যারের কাছ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, “গতকাল একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে এমন কাজ করবে না বলে মুচলেকা দিয়েছে। ভুল স্বীকার এবং রানিং স্টুডেন্ট হিসেবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমও চলমান আছে। ফলে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তাদের কাউন্সিলিং করা হবে, আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। আমরা একাডেমিকভাবে ব্যবস্থা নেব। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যানদের মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও পাঠানো হবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী