জাবির নারী সহকারী প্রক্টরের পোশাক নিয়ে কটূক্তি, ছাত্রদল নেতার বিচার দাবি
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ছাত্রদল নেতা নবীনুর রহমান নবীন ও বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সহকারী প্রক্টর শামীমা নাসরিন জলির পোশাক নিয়ে কটূক্তি করা শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নবীনুর রহমান নবীনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রক্টর অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, নবীন চাচ্চুর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘নবীন চাচ্চুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘বয়কট বয়কট, নবীন চাচ্চু বয়কট’, ‘বোরকার কটুক্তি, মানি না-মানবো না’, ‘নারীর পর্দার নিরাপত্তা, নিশ্চিত করো করতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়৷
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর তিন দফা দাবি সম্বলিত লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। তাদের দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত নবিনের সব একাডেমিক সনদ বাতিল এবং ক্যাম্পাসে প্রবেশে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে; ক্যাম্পাসে একাডেমিক এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং বৈষম্যমূলক আচরণ (যেমন- দাড়ি, টুপি, বোরখা, হিজাব, নিকাব, শাঁখা, সিঁদুর ইত্যাদি নিয়ে কটুক্তি বা বৈষম্য) নির্মূলে নীতিমালা প্রণয়ন ও সেল গঠন করতে হবে; পরিচয় শনাক্তকরণে ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার অন্তর বলেন, “ধর্মীয় পোশাক বা দাড়ি-টুপি থাকলেই একটা নির্দিষ্ট এজেন্ডাতে পাঠিয়ে দেওয়ার চর্চা ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত দেখেছি। সবাই নারী স্বাধীনতার কথা বলি আমরা, তো বোরকা পরার স্বাধীনতা কি নারীর স্বাধীনতা না? আমরা এই নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের চর্চা আর চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, সব মত-বিশ্বাসের অংশগ্রহণে একটা সুস্থ্য পরিবেশের, সুস্থ্য শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত হবে। আমাদের উল্লিখিত দাবির ব্যত্যয় হলে আমরা বসে থাকবো না। স্বাধীনতার উপর কোন ধরনের হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না।”
একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম সেখানে উপস্থিত হন৷ এ সময় তিনি বলেন, “তোমাদের দাবিগুলো আমি শুনেছি। তোমরা লিখিত আকারে অভিযোগগুলো দিলে আমরা সেটি প্রশাসনের কাছে পৌছে দিব।”
এর আগে, গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) থার্টি ফার্স্ট নাইটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রক্টরিয়াল বডি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিচ্ছিলেন। রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর সংলগ্ন এলাকায় ৮-১০ জনের একটি দল প্রাইভেটকারযোগে যাচ্ছিলেন। তাদের থামিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করা হলে একজন মেয়ে নিজেকে ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসাবে পরিচয় দেন।
এ সময় জাবি ছাত্রদল নেতা নবীন এসে মেয়েটিকে চলে যেতে বলেন। তখন সহকারী নারী প্রক্টর তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি সহকারী প্রক্টরের কাছে তেড়ে এসে দুর্ব্যবহার করাসহ পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নবীন ওই নারী সহকারী প্রক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, “আমরা মুজা পরেই ঘরে বসে থাকবো, আমাদের বোনেরা মুজা পরে ঘরে বসে থাকবে।”
এ সময় তার পাশে থাকা শিক্ষার্থীদের শুনিয়ে বলেন, “এই মুজা পরেই ঘরে বসে থাকবা, বাইর হবা না ভাইয়া, মুজা পড়ে বের হয়ো, বোরকা পড়ে বের হয়ো।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর শামীমা নাসরিন জলি বলেন, “আমরা দায়িত্বপালন করছিলাম। একজন ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আমরা ক্যাম্পাসে এটি আপাতত নিষেধ বলে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম। এ সময় নবীন এসে তাদের চলে চেতে বলেন।”
তিনি বলেন, “আমি খুবই নমনীয় ভাষায় তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আমার সাথে কথা বলেন। আমার পোশাক নিয়ে কটূক্তি করেন। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে কেন পোশাক নিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হবে? নতুন স্বাধীনতার পর এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।”
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা নবীনুর রহমান নবীন বলেন, “আমরা কয়েকজন হাঁটতেছিলাম। তখন দেখলাম একটি গাড়িয়ে থামিয়ে জিজ্ঞসাবাদ করা হচ্ছে এবং একজন শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা হচ্ছে। আমি ক্যাম্পাসের সাবেক একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য সেখানে কথা বলছিলাম।”
তিনি বলেন, “আমরা সবাই মিলেই তো ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখবো, তাই না? সাবেক হয়েছি বলে কি থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিজেদের মতো ঘুরতে পারি না? আগে তো আমরা সবাই মিলে ঘোরাঘুরি করতাম। আমরা তো ক্যাম্পাসে কোন অপকর্ম করতে আসিনি, আমাদের গাড়ির কাগজপত্র দেখিয়েছিলাম সেখানে।”
পোশাক নিয়ে কটূক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি নিজেও ধর্মপ্রাণ পরিবারের সন্তান। আমি আসলে ব্যক্তি আক্রমণ করে কথাটি বলতে চাইনি। ওনার সাথে আমার পূর্ব পরিচয় বা কোনো শত্রুতাও নেই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “আমার সহকর্মীর (ভুক্তভোগী নারী সহকারী প্রক্টর) সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা নয়। তিনি যদি লিখিতভাবে অভিযোগ জানান, তাহলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী