ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ‘বাতিল’

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২৩:২৯, ২ জানুয়ারি ২০২৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ‘বাতিল’

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করে রাবি প্রশাসন। সেখানে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব উপস্থিত ছিলেন। ছবি: রাইজিংবিডি।

প্রশাসনিক ভবনে দুই উপ-উপাচার্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১১ ঘণ্টা অবরূদ্ধ রাখার পর পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় আধাঘণ্টার একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্তে এসেছে প্রশাসন।

গত দুই মাস ধরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে শুরু করে আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১ জানুয়ারি) ভর্তি কমিটি জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কেবল সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং শিক্ষক ও কর্মকতাদের সন্তানদের কোটা বাতিল করা হয়।

এদিনই পোষ্য কোটার বিষয়ে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে নিজের অবস্থান প্রকাশ করে একটি দীর্ঘ  পোস্ট দেন। সেখানে উপাচার্য নকীব বলেছিলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের কোন অন্যায় আবদার মানার কোনো দায় আমার নেই।” ওই পোস্টে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য ১ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন।

প্রশাসনেরর এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার তার ফেসবুক পোস্টে রাবি প্রশাসনকে ১৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে পোষ্য কোটার বাতিল দাবি করেন। দাবি না মানলে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোষ্য কোটাবিরোধী পোস্ট দিতে থাকেন। 

দাবি না মানায় বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন তালাবদ্ধ করে ঘিরে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এতে দুই উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনিক ভবনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি পেশ করেন এবং দাবি মানা না হলে তালা খোলা হবে না বলেও ঘোষণা দেন তারা।

তাদের দাবিগুলো হলো- পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে; ফ্যাসিস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং দুইজন ফ্যাসিবাদী শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেওয়ায় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে কারণ দর্শাতে হবে।

এদিকে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও কোনো আশ্বাস না পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার আগামী রবিবার (৫ জানুয়ারি) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ এর ঘোষণা দেন।

অপরদিকে, সকাল সাড়ে ১১টায় অফিসার্স সমিতি নিজ কার্যালয়ে এক জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় পোষ্য কোটা পূর্বের ন্যায় ৫ শতাংশে পুনর্বহাল না করলে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ায় শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় এবং মুহূর্তেই ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিকে নতুন করে বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে প্রশাসন ভবনের চারপাশে জড়ো হতে থাকেন। ক্রমেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। টানা ১১ ঘণ্টা আটকে থাকার পর বাধ্য হয়ে রাত ৯টার দিকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, আধাঘণ্টার আলোচনা শেষে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পোষ্য কোটা বাতিল করতে বাধ্য হয় রাবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের পোষ্য কোটা থাকবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিকে, এ খবর জানার পরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে। প্রশাসন ভবনের থেকে বের করেন আনন্দ মিছিল। এ সময় তাদের কোটাবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “আলোচনায় সিদ্ধান্ত এসেছে, রাবির ভর্তি পরীক্ষায় কোন ধরনের পোষ্য কোটা থাকবে না। উপাচার্য স্যার চাচ্ছেন, একটা গ্রেজেটের মাধ্যমে এটা প্রকাশ করতে, যা একটু সময় সাপেক্ষ। তবে তিনি আমাদের কথা দিয়েছেন, তিনি এটা অবশ্যই করবেন। ২০২৪-২৫ থেকেই কার্যকর হবে এ সিদ্ধান্ত।”

তিনি আরও বলেন, “আবেদন ফি কমানোর ব্যাপারে স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আলোচনা সাপেক্ষে এটা অবশ্যই কমানো হবে। আমাদের এই দুইটাই যৌক্তিক দাবি ছিল, যা অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আমরা খুবই আনন্দিত এই বিজয়ে।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি এ পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ছিলাম। কিন্তু উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতির প্রতি আমাকে শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা থাকছে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “আমি যতদিন উপাচার্যের দায়িত্বে আছি, ততদিন পোষ্য কোটা থাকবে না। পরে কি হবে, সেটা আমি বলতে পারবো না।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়