জবি শিক্ষার্থীকে মারধর, প্রতিবাদী কর্মসূচিতে ছাত্রদল কর্মীর বাধা
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
মানববন্ধনের সামনে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক (লাল গোল চিহ্নিত)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীকে মারধর করায় হিউম্যান রাইটস সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, গত বুধবার (১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর ভবনে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী শিক্ষককে হিজাব নিয়ে কূটক্তি করেন শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। এ দুই ঘটনার প্রতিবাদে গত বৃহষ্পতিবার (২ জানুয়ারি) মানববন্ধন আয়োজন করে জবিস্থ হিউম্যান রাইট সোসাইটি।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্রদল নেতা অনিক আচমকা মানববন্ধকারীদের সামনে এসে ব্যঙ্গাত্মক সুরে ‘শিবির জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আক্রমণাত্মক আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে মানববন্ধন পণ্ড করার চেষ্টা করেন তিনি।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) হিউমান রাইটস সোসাইটি দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কায়েস সাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এ ধরনের উসকানিমূলক আচরণ একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের পরিবেশ, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে। এটি শুধু মানববন্ধনের পরিবেশ বিঘ্নিত করেনি, বরং সচেতন নাগরিকদের ন্যায্য দাবিকে অবমাননার অপচেষ্টা।
আরও বলা হয়েছে, আমরা মনে করি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার কারও অনধিকার চর্চার মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হতে পারে না। ছাত্রদল নেতা অনিকের এ অপেশাদার ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে এ অপরাধমূলক আচরণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই শিবির ট্যাগ দেওয়া হতো। জুলাই অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশে সেই ফ্যাসিস্ট ঐতিহ্যকে ধারণ করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তারা মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতে চায়। সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে করা মানববন্ধনে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে আরও ভয়ানক রূপ নেবে তারা।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অনিক বলেন, “হিউম্যান রাইট সোসাইটি মানববন্ধনে আমি জানার জন্য গিয়েছিলাম যে, ওখানে কি হয়েছে। কোন হুমকি বা চোখ রাঙ্গানো হয়নি। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।”
জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। কেও যদি এমন কিছু করে, যেটা কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করে, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমার কর্মীর এমন আচরণের জন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে লজ্জিত। আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কিছু কোন্দল চলছে। পদবঞ্চিতরা আন্দোলন করছে, আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। দ্রুত সংকট সমাধান করার চেষ্টা করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “আমি অভিযোগ পেয়েছি মারধরের পরের দিন সিন্ডিকেট থাকার কারণে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারিনি। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
মানববন্ধনে বিশৃঙ্খলা ও শিবির ট্যাগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “ট্যাগিং রাজনীতি কাম্য নয়। আমার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী