ঢাকা     সোমবার   ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৩ ১৪৩১

দলীয় কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার জাবি ছাত্রদলের

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ৪ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৯:৪৫, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
দলীয় কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার জাবি ছাত্রদলের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি বাস ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে জাবি শাখার পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা বাসগুলো ব্যবহার করেন।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট থেকে সেগুনবাগিচার কচি-কাঁচার মেলা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শাখা ছাত্রদলের সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মীরা। 

পরিবহন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শনিবার (৪ জানুয়ারি) দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ আহমেদ দুইটি বাস রিকুইজিশন আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ডবল ডেকার (দ্বিতল) ও সিঙ্গেল ডেকার বাস রিকুইজিশন দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, একটি লাল রঙের ডবল ডেকার ও একটি সবুজ রঙের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস অপেক্ষারত। সকালে শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়নের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিলের পর সেই বাসগুলোতে করে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। তবে মিছিলে থাকা অধিকাংশ নেতাকর্মীরই ছাত্রত্ব নেই। একপর্যায়ে দুপুর ১টার পরে বাস দুটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শাখা ছাত্রদলের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ট্রান্সপোর্ট চত্বরে দুইটি বাস থাকবে বলে জানান শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাব্বির হোসাইন।

তিনি এক বার্তায় বলেন, “শনিবার বিকাল ৩টার সময় ৩৭/এ সেগুনবাগিচাস্থ কচি-কাঁচার মেলা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জাবি ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী ছাত্র/ছাত্রীদের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণে যাতায়াতের জন্য সকাল ১১টার সময় জাবি ক্যাম্পাসের ট্রান্সপোর্টে একটি ডবল ডেকার ও একটি বড় বাস রেডি থাকবে। পূ্র্বের ঘোষণা মোতাবেক সবাইকে যথাসময়ে ট্রান্সপোর্টে উপস্থিত থাকার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।”

এদিকে, গত বছর ২৯ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচটি বাসের অনুমোদন দেয় পরিবহন অফিস। পরে এ বাসগুলোতে করে শান্তি সমাবেশে যোগ দেন জাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করায় সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলের হাত ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আবারো আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাস রিকুইজিশনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আওলাদ হোসেন বলেন, “আমি মায়ের অসুস্থতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আছি। তবে অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুইজন শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আবেদন করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে তাদের জন্য বাস অনুমোদন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “শিক্ষকরা প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নিতে পারেন। আবেদনে ব্যক্তিগত কারণ ছিল বলে অফিস থেকে অনুমোদন করা হয়েছে। পরে তারা কোন কাজে ব্যবহার করেছেন ,সেটা আমরা জানি না।”

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহারের সুপারিশের বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, “ছাত্রদলের কর্মীরা আমার নামে একটা বাস রিকুইজিশন চেয়েছিল, তাই দিয়েছি। এটাতো প্রশাসন দিচ্ছে না, আমি আমার ব্যাক্তিগত টাকা দিয়ে রিকুইজিশন দিয়েছি। এটাতে কোন সমস্যা দেখছি না। তারা যে দলীয় প্রোগ্রামে যাচ্ছে, সে দলতো নিষিদ্ধ না। তাদের একটা আলোচনা সভা আছে। তারা বাস নিয়ে তাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতেই পারে।”

বাস রিকুইজিশনের বিষয়টি অস্বীকার করে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ আহমেদ বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস রিকুইজিশনের জন্য আমি আবেদন করিনি এবং স্বাক্ষরও দেইনি। যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে করা হয়েছে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়