ঢাবিতে ‘হেইট থ্রু’ কর্মসূচি
জুতা নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানারে জুতা নিক্ষেপের মাধ্যমে ‘হেইট থ্রু’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস রাইটস ওয়াচ’ নামের একটি প্লাটফর্মের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
জুতা নিক্ষেপের জন্য রাখা ওই ব্যানারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক ইনান, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ছবি রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) স্টুডেন্টস রাইটস ওয়াচের ফেসবুক পেজে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হেইট থ্রু কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে জুতা নিক্ষেপ, রং নিক্ষেপ এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ঘোষণায় বলা হয়েছিল, “সবাই জুতা, ঝাড়ু নিয়ে চলে আইসেন। কালকে লীগকে জুতা, ঝাড়ু মেরে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে মোজো জিতে নেন।”
হেইট থ্রু কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘আমার সোনার বাংলায়, মুজিববাদের ঠাঁই নাই/স্বৈরাচারের ঠাঁই নাই’, ‘ হাসিনা/সাদ্দাম/কাদের/শয়নের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে’, ‘হই হই রই রই, ছাত্রলীগ গেলি কই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
বিকেল সোয়া ৩টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙানো হয়। এ সময় একদল শিক্ষার্থী সেখানে জুতা মারার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিনটি জুতা একসঙ্গে নিক্ষেপ করার সুযোগ পান। কেউ যদি জুতা নিক্ষেপ করে টানা তিনবার ব্যানারের নেতাদের গায়ে লাগাতে পারেন তাহলে তাকে পুরস্কার স্বরূপ একটি ‘মোজো’ দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতার আয়োজক শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘‘সাবেক স্বৈরাচার সরকার দেশের মানুষের উপর যে নিপীড়ন চালিয়েছে, তার হিসেব নেই। এখন সে জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে গেলেও আমরা সেই ক্ষতচিহ্ন বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি। সে জন্য আমরা আজকে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনাসহ সব নেতাদের ছবিতে গণজুতা মারা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। আমরা চাই এ দিনটি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাক।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহ-সমন্বয়ক মোসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, “ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা এক সময় হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। তারা রাতে বলতো, আগামীকাল ভাইটাল প্রোগ্রাম আছে। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হবে। সন্ত্রাসীরা আমাদের ক্লাস-পরীক্ষার সময়ও ব্যাঘাত ঘটাত।”
তিনি বলেন, “আমাদের দাসপ্রথার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল তারা। আমরা সন্ত্রাসীদের ছবিতে জুতা মারার পাশাপাশি, গেস্টরুম, গণরুম, ভাইটাল প্রোগ্রাম, আধিপত্যবাদ, লেজুড়বৃত্তি, ফ্যাসিবাদ, মুজিববাদ আমলের কবর রচনা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনের খুনীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারকে অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের ফ্যাসিবাদদের চাকরিচ্যুত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা শহীদ হয়েছে, তাদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী