চাকরি ফেরত চান স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া ঢাবি শিক্ষক
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ
২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় অবসরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) তিনি চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নিকট আবেদন করেছেন।
উপাচর্যকে দেওয়া আবেদন পত্রে ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ বলেন, “গত ১৫ বছর পতিত স্বৈরাচারের আমলে দেশ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল, যেখানে আইনের শাসন ও ন্যায়-নীতির কোন বালাই ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। মেধা ও যোগ্যতার বিচার না করে দলীয় আনুগত্য ও স্বার্থই মুখ্য বিষয় হয়ে পড়েছিল, এখানে দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন প্রচলিত হয়েছিল। আর এ চরম সংকটকালে আমার একাডেমিক জীবন ধ্বংসের লক্ষ্যে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এ সত্ত্বেও আমি ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি। আল্লাহর উপর ভরসা করে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল ছিলাম।
তিনি বলেন, “আমার কর্মস্থল ফার্সী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বেশকিছু অনিয়ম বিশেষত গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করি এবং বিভাগে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র শিক্ষকদের দলীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবে জুনিয়র শিক্ষকগণ অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। অনেক সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও তারা যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারেননি। আমি বাধ্য হয়ে তৎকালীন উপাচার্য অফিসে পর পর বেশ কয়েকটি আবেদন করি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অদ্যাবধি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ তো দূরের কথা শুধু দলীয় ও রাজনৈতিক কারণে আমলেই নেওয়া হয়নি। বিপরীতে আমার উপর নেমে এসেছিল একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি।”
তিনি আরও বলেন, “বছরের পর বছর আমার কনফার্মেশন ও পদোন্নতির ফাইল কখনো চেয়ারম্যান অফিসে, কখনো রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এবং কখনো উপাচার্য দফতরে ৫-৬ বছর পর্যন্ত আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং আমাকে একাডেমিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। মাত্র ৮-১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কেউ কেউ অধ্যাপক হয়েছেন। আর আমার একটি ফাইল ছয়বছর আটকে রাখা হয়েছে। ফলে আমি দীর্ঘ ২৭ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়েও অধ্যাপক হতে পারিনি।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এসব যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির শিকার হয়ে এক সময় হাঁপিয়ে উঠি এবং মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ি। এমনকি আমি আমার জীবন নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়ি। তখন নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করে হঠাৎ অরসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”
অবসরের কারণ উল্লেখ করে আরিফ বিল্লাহ বলেন, “আমার পিএইচডি ডিগ্রি শেষ হওয়ার পর আমি সোয়াসে পোস্ট ডক্টরাল করার অফার পাই। আমি ১ বছরের জন্য ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করি। এছাড়াও আমার ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ায় ভিসা বৃদ্ধির আবেদন করি। কিন্তু বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও আমার পাসপোর্ট ফিরে পাচ্ছিলাম না। এ সময় ইস্ট লন্ডনে আয়োজিত ৭২ এর সংবিধান সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করি। আমার এ বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দফতরে প্রেরিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমি ঢাকায় আমার এক সহকর্মীকে ফোন করি। এ সময় জনতে পারি তিনদিনের মধ্যে দেশে ফিরে কাজে যোগদান না করলে আমার চাকরি থাকবে না মর্মে একদিন আগে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। বললাম, আমি তো কোনো নোটিশ পাইনি। কোনো ইমেইলও পাঠানো হয়নি।”
ওই সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন উল্লেখ করে এ শিক্ষক বলেন, “বাসায় বসেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিসা সংক্রান্ত অফিসারদের কয়েকজনকে ফোনে আমার সমস্যার বিষয়ে জানালাম। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। দেশে এসে নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগে বিভাগে যোগদান করে এ যাত্রায় চাকরি রক্ষা করলাম বটে, কিন্তু আমার উপর ষড়যন্ত্রের অব্যাহত থাকে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী