ঢাকা     বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৫ ১৪৩১

সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ  

ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৪, ৭ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২২:০১, ৭ জানুয়ারি ২০২৫
সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ  

ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। 

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ  অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় তারা বিএসএফ এর সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে দোষীদের বিচার দাবি করে। 

মিছিলে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ঢাকায় এবার উঠলো ডাক, বিএসএফ নিপাত যাক’, ‘ফেলানী স্বর্ণা জয়ন্ত, হত্যা চলছে অনন্ত’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ হলো সীমান্ত হত্যা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ২ হাজারের বেশি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত নতজানু পররাষ্ট্র নীতির জন্য আমরা এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার সুষ্ঠু পায়নি। বিজিবি শুধু পতাকা বৈঠক করে নিহত বাংলাদেশীদের লাশ নিয়ে আসার কাজেই নিয়োজিত। বিজিবিকে আগের সেই শক্তি ফিরিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্তচক্ষু দেখিয়ে সীমান্তে অবস্থান করতে পারে নতুবা বিজিবিকে পুনরায় বাংলাদেশ রাইলফেলসে (বিডিআর) জাগ্রত করতে হবে।

ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সীমান্তে হওয়া প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে এসেছি। বিগত সময়ে বর্ডার গার্ডকে বস্তুত সীমান্তের দারোয়ান হিসেবে রাখা হয়েছে, যাদের কেনো কর্তৃত্ব নেই। আমরা সীমান্তরক্ষীদের ক্ষমতায়নের জন্য এসেছি। আমাদের সীমান্ত রক্ষীদের হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “এ জুলাইয়ে আমরা আবার স্বাধীনতা অর্জন করেছি৷ শহীদ ফেলানী ও শহীদ আবরার ছিল আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দুর্বার প্রেরণা। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফেলানী ও আবরাররা বারবার ফিরে আসবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, “অন্তর্বতী সরকারকে আমরা বলতে চাই, মেরুদন্ড নিয়ে চলুন। আমরা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি চাই। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারত সরাসরি যুক্ত ছিল। দেশপ্রেমিক সেনাদের হত্যার পর বাংলাদেশে তারা পুতুল সরকার হাসিনার মাধ্যমে তাদের আগ্রাসনের শিকার বানিয়েছিল। তারা আমাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশীদের লাশ আর মাদক ছাড়া কিছু দেয়নি।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি ভারতীয় মিডিয়া কিভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। তারা চট্টগ্রাম, রংপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা নিয়ে উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচার করেছে। তাদের নেতারাও উস্কানিমূলক কথা বলার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা চলাচ্ছে। তাদের এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”

তিনি সরকারের কাছে দাবি করে বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচনা করতে হবে। সীমান্ত ২ সহস্রাধিক বাংলাদেশীকে হত্যায় দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে।”

এদিকে, মঙ্গলবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ফেলানী হত্যার বিচার দাবি ও প্রতিবাদী কর্মসূচির পালনের আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। প্রতিরক্ষা, স্বনির্ভরতা এবং জাতীয় স্বার্থেকে মূলনীতি হিসেবে ধরে এ সংগঠনটি কাজ করবে বলে জানান এর উদ্যোক্তারা। 

প্রাথমিকভাবে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটি। এতে আহ্বায়ক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওয়ালী উল্ল্যাহ, সদস্য সচিব হিসেবে সরকারি বাঙলা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলামিন আটিয়া এবং মুখপাত্র হিসাবে সাধারণ আলেম সমাজের সাবেক আহ্বায়ক মুফতি রিদওয়ান হাসানকে রাখা হয়েছে।

সংগঠনটির ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা বারবার নানা ধরনের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক আধিপত্যবাদ, অর্থনৈতিক শোষণ, সাংস্কৃতিক দখলদারিত্ব এবং সীমান্তে অমানবিক হত্যাকাণ্ড আমাদের জাতিকে বারবার রক্তাক্ত করেছে। এসব আঘাত আমাদের স্বপ্নময় ভবিষ্যতের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক নির্মমভাবে কিশোরী ফেলানী খাতুনকে হত্যা করা হয়। কাটাতারে ঝুলে থাকা তার নিথর দেহের ছবি আমাদের জাতিকে চিরদিনের জন্য লজ্জিত ও ব্যথিত করে রেখেছে। আজও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, যা আমাদের জাতীয় আত্মমর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের ওপর এক গুরুতর আঘাত।

ফেলানী হত্যাকাণ্ড আমাদের জন্য এক প্রতীক। এটি সীমান্ত হত্যার নিষ্ঠুর বাস্তবতা এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর চলমান আগ্রাসনের উদাহরণ। এর মধ্য দিয়ে আমরা উপলব্ধি করেছি, শুধু প্রতিবাদ নয়, আমাদের একটি সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।

সদস্য সচিব আলামিন আটিয়া জানান, শুধু ফেলানী নয়, অন্যান্য সীমান্ত নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের শহীদি মর্যাদার জন্য তারা কর্মসূচি হাতে নেবেন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়