ভুলে ভর্তি সম্পন্ন করতে পারেনি ৩ শিক্ষার্থী, সুযোগ দিল বাকৃবি
বাকৃবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রমে সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিন শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী হলেন, মোছা. শিলা আক্তার শম্পা, রুবায়েত শারমিন আফিফা ও নওশীন তাসনিম শশী। তারা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বাকৃবিতে ভর্তির সুযোগ পান।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মানবিক দিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ওই তিন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হয়ে ক্লাস করার অনুমতি দেয়। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিষয়টি জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
জানা গেছে, তারা নিজেদের ভুলে ভর্তির কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা না দিয়ে বাসায় চলে যান। পরে বিষয়টি বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলামের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে কিছুদিন সময় নেয় প্রশাসন। পরে আলোচনা সাপেক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে মানবিক দিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তির সুযোগ দেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোছা. শিলা আক্তার শম্পা বলেন, “আমি গত ৯ ডিসেম্বর বাকৃবিতে ভর্তি হতে এসেছিলাম। আসার পর ভর্তি কার্যক্রমের মেডিকেল চেকআপ, হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর, ডিন স্যারের স্বাক্ষর নিয়েছিলাম। সবকিছু সম্পন্ন করার পর ডিন অফিস থেকে আমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। পরে রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর না নিয়ে এবং কাগজপত্র জমা না দিয়েই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বাসায় চলে আসি।”
তিনি বলেন, “আমার উচিত ছিল কাগজপত্র জমা দিয়ে পরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পরে আমাকে একজন বলেছিলো যে তোমার কাজ শেষ চলে যাও। তাই চলে এসেছিলাম। পরে দেখি ওয়েবসাইটে মাইগ্রেশনে সবার বিষয় পরিবর্তন হলে কিন্তু আমার হয়নি। আমি মনে করেছিলাম, হয়তো কারিগরি ভুল। তাই কৃষিগুচ্ছের নিয়ন্ত্রণকারী হেল্পলাইনে মেইল করি। তারা দুইদিন পর আমাকে মেইলের উত্তরে জানান, আমি অনুপস্থিত।”
তিনি আরও বলেন, “এটা জানার পরই আমি বাকৃবিতে এসে প্রথমে প্রক্টর অফিসে যাই, ওখান থেকে রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠায়। সেখানে কথা বললে উনারা জানান, ভর্তি শেষ হয়ে গেছে, এখন আর কিছু করার নেই। আমি ওখান থেকে ডিন অফিসে আসি। পরে ডিন অফিসে আমাদের ফ্যাকাল্টির হুমাইদা ভাইয়া, সাদাত ভাইয়াসহ কয়েকটা ভাইয়া বসে ছিল। তারা বিষয়টি জানতে পেরে আমাদের নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে যান, সেখানে তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। তারপর তারা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে দেখা করালে স্যার জানান, তিনি বিষয়টি দেখবেন।”
ওই শিক্ষার্থী বলেন, “পরে আমরা ২৯ ডিসেম্বর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। বাকৃবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শফিক ভাই অনেক সাহায্য করেন। তিনি আমাকে নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন এবং কৃষি গুচ্ছ নিয়ন্ত্রণকারী চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। পরে উপাচার্য স্যার আমার ফর্মের ছবি তুলে সিভাসু উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দেন।”
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, “যেহেতু আমি সেকেন্ড টাইমার (দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থী) ছিলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি ক্যান্সেল করে আসছি, তারা মানবিক বিবেচনায় আমাকে ভর্তির সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখানে ভর্তি বাতিল হলে আমার পড়াশোনার সুযোগই থাকতো না।”
এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন সেকেন্ড টাইমার এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি বাতিল করে এসেছেন। যখন জানলাম অল্প ভুলের জন্য তাদের ক্যারিয়ারটা নষ্ট হতে চলেছে। তখন আমি পরদিন উপাচার্য স্যারের কাছে গিয়ে যথেষ্ট অনুরোধ করলাম। তাদের অভিভাবকরাও আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে চেষ্টা করেছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজটি সফলতার মুখ দেখেছে।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “ওই শিক্ষার্থীরা ৭৫ শতাংশ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছিল। কিন্তু নিজেদের একটু বোঝার ভুলের কারণে পরিপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। ফলে তাদের ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। যেহেতু তারা মেরিটে নিজের যোগ্যতা দিয়েই চান্স পেয়েছিল, তাই আমরা চিন্তা করলাম শিক্ষার্থীদের একটু বোঝার ভুলের কারণে নিজেদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা ভর্তি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় সিভাসুর ভিসি স্যারের সাথে যোগাযোগ করি এবং আমাদের এড হক মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেই।”
তিনি বলেন, “তারা যেহেতু মেরিটে চান্স পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল এবং একটু বোঝার ভুলের কারণে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাই তাদের বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি ও ক্লাসের সুযোগ দিয়েছি।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী