ভাইরাল হতে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীর অপহরণ ‘নাটক’
যবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী সজীব হোসেনকে উদ্ধার করেছে যশোর জেলা পুলিশ। পুলিশ বলছে অপহরণ বা গুম নয়, ব্যক্তিগত কারণে বন্ধু নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি।
এদিকে তার বন্ধুরা জানিয়েছে, ভাইরাল হওয়ার জন্য অপহরণের নাটক সাজায় সজীব। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে যশোর জেলা পুলিশ মিডিয়া সেল থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সজীব হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি গত নভেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন এবং বিপ্লব ২৪ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। এছাড়া সম্প্রতি তিনি যবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলে যোগ দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ৯ টার পর থেকে সজীব হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে তাকে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের নেতা দাবি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত যবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কমিটি গঠন হয়নি বলে জানা গেছে।
থানায় ডায়েরি করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট দ্রুত তদন্ত শুরু করে। তাদের তৎপরতায় বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে সজীবকে তার বন্ধুর বাসা থেকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ।
এ ঘটনাকে ‘নাটক’ দাবি করে তার বন্ধু ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন বলেন, “সজিব ভাইরাল হওয়ার জন্য আত্মগোপন করেছে। ও যখন আমাকে ম্যাসেজ দেয় ‘তুই কই? আমার সাথে একজন খারাপ ব্যবহার করছে, তিন-চার জন ছেলের হাতে ছুরি আছে।” তারপরে ওকে কেউ অ্যাটাক করছিল এবং দৌড়ানি দিছিল। পরবর্তীতে সে এক বন্ধুর কাছে চলে যায়।”
তিনি বলেন, “রাত ৯টার পর থেকে পরের দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমাকে জানালো না কেনো যে আমি সেইভ আছি, ভালো আছি। ও যেখানে ছিল অবশ্যই ফোন ছিল। ওর জন্য আমি সারারাত-দিন শিক্ষক, ডিএসবি, এনএসআই, পুলিশ, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি মনে করি আমাকে ব্যবহার করে নিজেকে ভাইরাল করার জন্য এ আত্মগোপনের নাটক করেছে সজীব।”
এদিকে এ ঘটনাকে প্রতারণা বলে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, “সজীব যে বিতর্কিত কাজটি করেছে, সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। হাইলাইট হওয়ার জন্য ছাত্রদের আন্দোলনকে বাজেভাবে ব্যবহার করেছে। এতে করে ছাত্র সমাজ যেভাবে অপমানিত হয়েছে, পাশাপাশি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্ষুণ্ন করেছে।”
তিনি বলেন, “সজীব যে নাটক মঞ্চস্থ করেছে তার মদদদাতা যারা, তাদের খুঁজে নিয়ে আসা হোক। কেন তারা এমন নাটক মঞ্চস্থ করল? কেন শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলা করা হলো? আমরা মনে করি সজীব যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এর জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যাতে, ভবিষ্যতে অন্য কোন ছাত্র নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলতে না পারে।”
ঘটনার বিষয়ে জানতে সজীব হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগের করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী