ঢাকা     শুক্রবার   ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৬ ১৪৩১

বাকৃবি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, গ্রেপ্তার ৩

বাকৃবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৯ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২২:৫১, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
বাকৃবি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, গ্রেপ্তার ৩

গ্রেপ্তার তিন অপহরণকারী ও উদ্ধার করা ২৪ হাজার টাকা

ময়মনসিংহ শহরে টিউশন করাতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানতে পেরে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

ভুক্তভোগী সাজিদ হাসান (২০) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শহীদ শামসুল হক হলের আবাসিক ছাত্র। তার পিতার নাম ডিএম হাসান আলী।

এদিকে, বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং তাদের থেকে ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার অপহরণকারীরা হলেন- নাফিজ আহম্মেদ জয় (১৯), সানজিদ আলম (১৯) ও মুশফিকুর রহমান ফুয়াদ (১৫)। তারা সবাই ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী মডেল থানাধীন বলাশপুরের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিষয়টি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম। 

ভুক্তভোগী সাজিদ হাসান জানান, গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি রাত ৭টার দিকে তিনি কোতোয়ালী মডেল থানাধীন আলীয়া মাদ্রাসা রোডে টিউশনি শেষ করে বের হন। নাফিজ আহম্মেদ জয় (১৯) তাকে আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় টিউশনি দেওয়ার কথা বলে মুশফিকুর রহমান ফুয়াদের (১৫) বাসার তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে যান। তিনি ছাদে গিয়ে দেখেন, সেখানে সানজিদ আলম (১৯) ও ফুয়াদ অবস্থান করছেন। তখন তারা তিনজন মিলে অন্যায়ভাবে আটক করে তার কাছে থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে বেধড়ক মারধর করেন তারা।

তিনি জানান, জয় তার মানিব্যাগে থাকা ৫০০ টাকা ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম ভিসা কার্ড নিয়ে যান। এরপর সানজিদ পকেট থেকে ছুরি বের করে এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড চাইলে তিনি ভয়ে দিয়ে দেন। এক পর্যায়ে ফুয়াদ তার মোবাইল নিয়ে নেন। পরে মুক্তিপণের জন্য তার বাবার নাম্বারে কল দিয়ে বলেন, ‘আপনার ছেলেকে আটক করে রেখেছি। তাকে বাঁচাতে চাইলে আপনার ছেলের বিকাশ নাম্বারে ১ লাখ টাকা পাঠান।’

তিনি আরও জানান, অপহরণকারীদের কথা মতো তখন তার বাবা ছেলেকে বাঁচানোর কথা চিন্তা করে বিকাশে তিন ধাপে ২০ হাজার ২০০ টাকা পাঠান। পরে জয় তার ভিসা কার্ড থেকে ৯ হাজার ৫০০ টাকা ও মোবাইলের বিকাশ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করেন। শেষে ছেড়ে দেওয়ার সময় কাউকে কিছু জানালে খুনের হুমকি দেন অপহরণকারীরা।

ভুক্তভোগী জানান, তিনি ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে গিয়ে বন্ধুসহ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার তাকে কোতয়ালী  মডেল খানায় জিডি করতে নিয়ে যান। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ বুধবার (৮ জানুয়ারি) তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে বলাশপুর এলাকা থেকে জয়কে আটক এবং তার কাছ থেকে মুক্তিপণের ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। পরে জয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সানজিদ ও ফুয়াদকে কেওয়াটখালী এলাকা থেকে আটক ও মুক্তিপণের ৯ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, “ঘটনাটি আমাদের কানে আসার পরই আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নেই এবং থানায় ফোন দিয়ে জানাই। থানা থেকে ওই ছাত্রকে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়। তখন ওই ছাত্রের সঙ্গে তার বাবাও উপস্থিত ছিলেন। আমরা যানবাহন দিয়ে তাদের সহযোগিতা করি।”

তিনি বলেন, “পুলিশ প্রশাসন তাদের খুবই সহযোগিতা করেছে। ওসির সঙ্গেও কথা হয়েছে। উপাচার্য স্যার ও ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা এ বিষয়ে অবহিত। উপাচার্য স্যারের দিকনির্দেশনায় অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাতের মধ্যেই পুলিশ ওই তিনজনকে আটক ও ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।”

কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা তিনজনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছি। তাদের নামে মামলা করা হয়েছে এবং তারা এখন জেলে রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো তদন্ত চলমান রয়েছে।”

তিনি বলেন, “৩০ হাজার টাকার মধ্যে আমরা ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করেছি। বাকি টাকা আসামিরা খরচ করে ফেলেছে। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ি তাদের বিচার হবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়