চবিতে নতুন নীতিমালা
শুধু ভাইভা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ নয়
চবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আগের মতো শুধু ভাইভা নিয়ে নয়, সুনির্দিষ্ট তিনটি ধাপ অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক নিয়োগে নতুন নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, স্পেশাল বোর্ডের তদারকিতে পর্যায়ক্রমে লিখিত পরীক্ষা, ডেমো ক্লাস ও ভাইভায় উত্তীর্ণদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। যেখানে আগে শুধু ভাইভার মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ছিল বিগত প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এছাড়া, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাবে শিক্ষক হতেন অনেকে। ফলে, বাদ পড়তেন অনেক যোগ্য প্রার্থী।
আগের সরকারের সময়ে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলেছে রমরমা নিয়োগবাণিজ্য। এর ব্যতিক্রম ছিল না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে চবিতে বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে অনেক অডিও ফাঁস হয়েছে। পালি বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে অবৈধভাবে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছিল।
বিভিন্ন বিভাগে অনেকে আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষক হয়েছেন। এই নিয়োগবাণিজ্যে চবির ইতিহাসে রেকর্ড গড়েছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার চৌধুরী।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে সংস্কার। চবিতে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানামুখী সংস্কারে হাত দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে হলো নতুন নীতিমালা, উদ্দেশ্য—যোগ্য শিক্ষকদের হাতে যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দুর্নীতিতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা অতি নিম্নমানের পাঠদান করায় ক্লাসে মনযোগী ও নিয়মিত হতে পারছেন না তারা। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ফিরে আসবে। নীতিবান ও যোগ্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এগিয়ে যাবে দেশের অন্যতম শীর্ষ এ বিশ্ববিদ্যালয়।
সংশোধিত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা সম্পর্কে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেছেন, “শতভাগ স্বচ্ছতার জন্য আমরা শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করেছি। এটি গত সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়েছে। যেখানে আগে শুধু একটি গতানুগতিক ভাইভার নাটক করা হতো। আগেই ঠিক করা হতো, কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সে প্রথা থেকে বের হয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকর্ষণ করার জন্য এ নীতিমালা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই নীতিমালায় আবেদনযোগ্য প্রার্থী প্রথমে পরীক্ষা দেবেন। উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ডেমো ক্লাস ও প্রেজেন্টেশন করবেন তারা। সর্বশেষ পর্যায়ে ভাইভায় উত্তীর্ণ হলে তিনি নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন।”
উপ-উপাচার্য আরো বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো দলীয় পরিচয় বিবেচিত হবে না। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চৌকস ও যোগ্য প্রার্থীরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন।”
ঢাকা/মিজানুর/রফিক