তিন দাবিতে গণঅনশনে জবি শিক্ষার্থীরা, পাশে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক সমিতি
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ তিন দাবিতে গণঅনশন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, তিন দফা দাবিকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে জবি শিক্ষক সমিতি।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল থেকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ গণঅনশন শুরু করেন তারা। প্রথমে কয়েকজন শুরু করলেও ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিভাগের অসংখ্য শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যম্পাসের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ, ৬ বছরে কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় সেনাবাহিনীর কাছে কাজ হস্তান্তর করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা গণঅনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো- সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে; পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে; আবাসন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ৭০% শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
অনশনকারী ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস শেখ বলেন, “এ সরকার থাকাকালে যদি আমরা আমাদের মৌলিক দাবি দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও আবাসন সংকট সমাধান করতে না পারি, আর কখনোই তা সম্ভব হবে না। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ১৮-১৯ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমি সুযোগ সুবিধা, আবাসন ব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ গড়তে পারেনি। এ সরকার জনগণের সরকার, বিপ্লবীদের সরকার। আমরা আশা রাখি তারা আমাদের দাবি গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অতিদ্রুত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।”
অনশনে বসা ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য বড় একটা আন্দোলন হলো এবং সেখানে মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই প্রশাসনের এ ব্যাপারে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। তাই আমরা গণ অনশন কর্মসুচি ঘোষণা করেছি।”
অনশনে বসা অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাশিদুল ইসলাম, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহান প্রামাণিক, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ, দর্শন বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস শেখ।
অনশনকারীদের মধ্যে আরো আছেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান তানজিল, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন চন্দ্র সুকুল, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের ইসলাম রিয়ন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবু মুসা, ফিন্যান্স বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন এবং আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিউল ইসলাম।
এদিকে, বিকেলে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের যৌক্তিক দাবিতে পাশে থাকার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “তোমরা আমাদের সন্তান। তোমাদের এভাবে অনশনে রেখে আমরা শিক্ষক সমিতি বসে থাকতে পারি না। আমরা তোমাদের সব দাবির সঙ্গে একমত। তোমরা যেই কর্মসূচি দাও আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি প্রশাসনের কেউ হয়ে আসিনি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রয়োজনে আমরা তোমাদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের কাছে যাব। কবে কাজ হবে সেটি প্রশ্ন করব। সেনাবাহিনীর কাছে কাজ গেলে আমাদের সকলের ভালো লাগবে।”
এ সময় অনশনরত উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, “আমরা আর কোন আশ্বাস চাই না। আপনারা আমাদের কাছে আসবেন না। আপনারা মন্ত্রণালয়ে চলে যান, ইউজিসিতে চলে যান। প্রশাসনসহ আপনারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে চলে যান। সমাধান সেখান থেকে নিয়ে আসেন। এরপর আমাদের অনশন শেষ করব। এর আগে আমাদের অনশন আমরা চালিয়ে যাব।”
এর আগে, অনশনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী