ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ৩০ ১৪৩১

জবির দ্বিতীয় ক‍্যাম্পাস: দুর্নীতির ‘মূল হোতা’ প্রকল্প পরিচালক

মো. লিমন ইসলাম, জবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২৩:২৭, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
জবির দ্বিতীয় ক‍্যাম্পাস: দুর্নীতির ‘মূল হোতা’ প্রকল্প পরিচালক

জবির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের উপ-প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম নতুন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের অনিয়ম, শিক্ষা ছুটি ছাড়াই পিএইচডি গবেষণা করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

তবে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও লোক না পাওয়ার অযুহাত এনে তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জবি উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমিরুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ- প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় শিক্ষা ছুটি ছাড়াই ডুয়েট থেকে রেগুলার মাস্টার্স করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা না মেনে শিক্ষা ছুটি ছাড়াই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পিএইচডি করছেন বলে জানা গেছে।

তিনি টেন্ডার ছাড়াই প্রকৌশল দফতরকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বড় বড় কাজ ও কেনাকাটা সম্পন্ন করতেন। তিনি তার দুর্নীতি জায়েজ করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসর সাবেক কোষাধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার ব‍্যক্তিগত কক্ষে একসঙ্গে নামাজ পড়া, ব‍্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করা, যাত্রাবাড়ীতে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া- এসবই ছিল তার কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, দ্বিতীয় ক‍্যাম্পাস প্রকল্পের যাবতীয় দুর্নীতির ‘মূল হোতা’ এ আমিরুল ইসলাম। কেননা প্রকল্প অফিসের একমাত্র স্থায়ী প্রকৌশল প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান তাকে প্রকৌশল দপ্তর থেকে প্রকল্পের বিশেষ দায়িত্বে নিয়োগ প্রদান করেন।

তিনি প্রকল্পের প্রকৌশল প্রধান (২০০ একর জায়গায় রাস্তা তৈরির কারিগর ও একমাত্র পাহাড়াদার) হয়ে কাজ বাস্তবায়ন করেন। আবার তিনিই প্রকল্পের টপ সুপারভিশন কমিটির প্রকৌশল সদস‍্য সচিব হয়ে কাজের মান যাচাই করেছেন গত ৬ বছর ধরে। তিনি নিজেই কাজ করেছেন, আবার সেই কাজের সুপারভিশনের দায়িত্ব‌ও তিনি পালন করেছেন। এ ক্ষেত্রে কে কার কাজ বুঝে নিয়েছেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

সদস্য সচিব নিয়োগ পেয়েই নিজেকে অপরিহার্য প্রতিষ্ঠা করার জন‍্য পরামর্শকের কাজও নিজেই সম্পন্ন করতেন। সব ড্রয়িং ডিজাইন (ডিজিটাল কপি করে) নিজের আয়ত্তে নিয়ে পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়া দিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল ডিজাইন করেন। এ সুযোগে দ্বিতীয় ক‍্যাম্পাসের অধিগ্রহণকৃত সব নিলামের খোয়া বাউন্ডারি ওয়ালে ব‍্যবহার ও তার সুযোগ তৈরি হয়।

এছাড়াও লেকে অনিয়ম, পুকুর, ঘাটলা, বালু ভরাট কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, অতিরিক্ত ইস্টিমেইট, বিল সুপারিশ, প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার যাবতীয় কাজের যৌথ প্রযোজক উপ-প্রকৌশলী তিনি।

প্রকৌশলী আমিরুল ইসলামের এসব দুর্নীতির মূলখুটি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কথা বলে অডিটোরিয়ামে কান্নাকাটি করা সেই মিজানুর রহমানের শিক্ষক ও ফ‍্যাসিবাদী আমলে দুইবারের সাবেক জবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া। তিনি আমিরুলকে তার ছেলে বলে সম্বোধন করতেন। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কাজের সঙ্গে জড়িয়েছেন, সেখানেই অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ আমিরুলের বিরুদ্ধে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ এর প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় গত ৯ জানুয়ারি পরবর্তী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় আমিরুল ইসলামকে। পদত্যাগ করা সৈয়দ আলীর বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।

সাবেক প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসের প্রকল্প দেখভাল করছিলেন। গত ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটিতে বলা হয়েছিল, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, কেমিক্যালস ও গ্লাসওয়ার মালামালের বিষয়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯০০ টাকার স্থলে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮৫০ টাকা নথিতে দিয়েছেন তিনি।

নতুন দায়িত্বে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলামের কাছে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রাইজিংবিডির প্রতিবেদককে তিনি সশরীরে দেখা করতে বলেন। কিন্তু দেখা করতে গেলে তাকে কোনভাবেই দপ্তরে পাওয়া যায়নি। পরে একবার তারা মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তিনি তার মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। 

এছাড়া সাবেক জবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসায় তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের হাতে এখন অন্য কোনো বিকল্প নেই। কাজটি তো চালাতে হবে। তাই সাময়িকভাবে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর দক্ষ প্রকল্প পরিচালক হিসেবে বগুড়ার একজনকে পেলেও শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খলা করার কারণেই নাকি তাকে দায়িত্বে আনা হয়নি। ইউসিজি থেকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা অনুমতি চেয়েছি।”

ঢাকা/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়