ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাংলাদেশের লড়াইয়ের পুঁজি

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ১৫ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশের লড়াইয়ের পুঁজি

৭০ রান করার পথে শট খেলছেন তামিম ইকবাল

আবু হোসেন পরাগ : শুরুটা ছিল বিবর্ণ। এরপর পথ দেখিয়েছেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাদের শতরানের জুটি ভাঙার পর আবার পথ হারিয়েছে দল। তবে শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

এজবাস্টনে আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতকে ২৬৫ রানের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিস্ফোরক সব ব্যাটসম্যানে ঠাসা ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের সামনে লক্ষ্যটা বড় নয়। তবে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা অসাধারণ কিছু করতে পারলে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতাও অসম্ভব নয়।

ইতিহাস বলছে, এজবাস্টনে ২৬৫ বা এর বেশি রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা আছে মাত্র দুটি। এর একটি ছিল ৬০ ওভারের ম্যাচ, অন্যটি ৫৫ ওভারের। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৭ রান তাড়া করতে নেমে ১ উইকেটে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের দেওয়া ২৭৮ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৬ উইকেটে। 

এদিন টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর শুরু হয় ম্যাচ। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে ফ্লাড লাইটগুলো জ্বলে ওঠে সাত-সকালেই। আকাশের মতো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও হয় আঁধারে।

আগের দুই ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ সৌম্য সরকার আরেকবার হতাশ করেছেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান প্রথম ওভারেই ভুবনেশ্বর কুমারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ভেতরে টেনে প্লেড-অন হয়েছেন। তার নামের পাশে শূন্য, বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১ উইকেটে ১ রান!

তিনে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছিলেন সাব্বির রহমান। অন্যপাশে তামিম ইকবাল ছিলেন সতর্ক। কিন্তু টানা ১৩ বল ডট যাওয়ার পরই যেন ধৈর্য হারালেন সাব্বির। ভুবনেশ্বরের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে সাব্বির (২১ বলে ১৯) ক্যাচ দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রবীন্দ্র জাদেজাকে। ৩১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে বাংলাদেশ।

এরপর দলকে এগিয়ে নিয়েছেন তামিম ও মুশফিক। তামিম যদিও ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৭ রানেই। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়ার বলে প্লেড-অন হয়েছিলেন, কিন্তু পান্ডিয়ার বলটা ছিল নো! জীবন পেয়ে সেটি কাজে লাগিয়েছেন তামিম। তুলে নিয়েছেন ফিফটি। ১৯তম ওভারের শেষ বলে জাদেজাকে চার হাঁকিয়ে তামিম ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৬২ বলে। তার ওই বাউন্ডারিতে পেরিয়েছে দলের শতরানও।

মুশফিক শুরু থেকেই খেলেছেন দেখেশুনে। রানের খাতা খুলেছেন ভুবনেশ্বরকে টানা তিন চার হাঁকিয়ে। পরে ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৬১ বলে। তামিম-মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে ২৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১৫২, তৃতীয় উইকেট জুটিও পেরিয়েছে শতরান। তখন মনে হচ্ছিল, অনায়াসেই তিনশ করে ফেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু হিসাবটা পাল্টে যেতে সময় লাগেনি!

পরের ওভারেই অফ স্পিনার কেদার যাদবের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন তামিম (৭০)। তার ৮২ বলের ইনিংসে চার ৭টি, ছক্কা একটি। পাঁচে নামা সাকিব আল হাসান উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। জাদেজার বলে মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্যাচ হওয়ার আগে সাকিব করেছেন ২৩ বলে ১৫। পরের ওভারে যাদবের বলে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকও (৮৫ বলে ৬১)। ২ উইকেটে ১৫৪ থেকে বাংলাদেশের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১৭৯!

দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন। দুজনের ব্যাটে বাংলাদেশ পেরিয়েছে দুইশ। দুজনের ৩৪ রানের জুটিটাও বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু জাসপ্রীত বুমরাহর বাউন্সার পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলেছেন মোসাদ্দেক (১৫)। সহজ ক্যাচ নিয়েছেন বোলার নিজেই।

রান তোলার তাড়ায় বুমরাহর পরের ওভারে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহও (২১)। ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, কিন্তু বুমরাহর ইয়র্কারে উড়ে নিয়ে গেছে অফ স্টাম্প। ৪৫ ওভারে ২২৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন অলআউট হওয়ার শঙ্কায়।

তবে অধিনায়ক মাশরাফি শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই শঙ্কা দূর করেছেন, দলকে এনে দিয়েছেন লড়াইয়ের পুঁজি। অষ্টম উইকেটে তাসকিনের সঙ্গে মাশরাফির অবিচ্ছিন্ন ৩৫ রানের জুটিতে ৮ উইকেটে ২৬৪ রান তোলে বাংলাদেশ। ২৫ বলে ৫ চারে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন মাশরাফি। অপরাজিত ১০ রান করে অধিনায়ককে সঙ্গ দেন তাসকিন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৭/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়