ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ওসির ‘অনিয়মে’ জনতা অতিষ্ঠ, ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের আশ্বাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ১৩ এপ্রিল ২০২৫  
ওসির ‘অনিয়মে’ জনতা অতিষ্ঠ, ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের আশ্বাস

ওসি রওশন আলী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায়, সংঘর্ষে আহতদের মামলা না নেওয়া, ফসলি জমি কাটায় জব্দকৃত ট্রাক্টর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তার এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিজয়নগরের চান্দুরা থেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন ও তার ভগ্নিপতি মো. সালমানসহ চারজনকে আটক করেন ওসি। এক লাখ ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের মারধর করে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১৫ রমজানের দিন উপজেলার ভিটিদাউদপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় রত্না আক্তারের ভাই সোহরাব মিয়া আহত হলে ওসি মামলা নেননি, বরং প্রতিপক্ষের মামলা নিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্যরাতে হরষপুর থেকে দুটি ট্রাক্টর জব্দ করার পর এক লাখ টাকা নিয়ে ওসি এসব ছেড়ে দেন। দ্বিতীয় দফায়, আরো তিনটি ট্রাক্টর জব্দের পর ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন।

ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘চাচাতো ভগ্নিপতি মো. সালমানকে সৌদিআরবে পাঠানোর জন্য বিজয়নগরের কাঠমিস্ত্রি ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী সালাম মিয়ার কাছে যাওয়ার সময় ওসি গাড়ি থামান। তল্লাশির সময় এক লাখ ১০ হাজার টাকা পাওয়া গেলে, ভগ্নিপতিকে মারধর করে থানায় নিয়ে যান। পরদিন ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করে জামিন নেন। যদিও টাকা ফেরত দিতে ভিডিও করা হয়, তবু মাত্র ৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।’’ 

বিজয়নগরের সাতগাঁও উত্তরপাড়া গ্রামের শাহীন মিয়া জানান, ঈদের দিন সকালে পূর্ববিরোধের কারণে সাতজন তাকে মারধর করেন। এই ঘটনায় ওসি মামলা নথিভুক্ত করেননি। 

ভিটিদাউদপুর গ্রামের রত্না আক্তার অভিযোগ করেন, বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে পূর্ববিরোধে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তার ভাই সোহরাব মিয়াকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তবে, ওসি প্রতিপক্ষের মামলা নেন এবং তাদের মামলা নথিভুক্ত করেননি। 

সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের নোয়াবাদী গ্রামের সালমা সুলতানার মাথায় ও হাতে দা দিয়ে কোপ দেয় প্রতিবেশী মাচ্চু মিয়া, তবে ওসি প্রথমে মামলা নথিভুক্ত করেননি। পরে, ভাতিজার মাধ্যমে তিনদিন পর মামলাটি নথিভুক্ত করেন।

এক গ্রামবাসী জানান, ফেব্রুয়ারিতে ওসি রওশন আলী দুটি ট্রাক্টর জব্দ করেন এবং এক লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। পরবর্তী সময়ে, আরো তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করা হলে ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে ছাড় দেয়। 

বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের খাবিবুর রহমান মনির এবং চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁ গ্রামের মিলন মৃধা ফেসবুকে ওসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং দ্রুত ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের আইনজীবী নাসির মিয়া বলেন, ‘‘ওসি যদি মামলা নথিভুক্ত না করেন, তাহলে তাকে নোট দেওয়া উচিত।’’ 

তবে, বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী অভিযোগগুলোর সত্যতা অস্বীকার করেন। পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘যদি পুলিশের কেউ কোনো অপরাধ বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

চট্টগ্রাম পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, ‘‘ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’’

ঢাকা/মাইনুদ্দীন/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়