বঙ্গবন্ধুর টানে...
বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

বিলাস দাস : শৈশব থেকেই হৃদয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে আসছেন আব্দুস সাত্তার ফকির (৫৩)। জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে নানা পেশায় যুক্ত হতে হয়েছে দুই সন্তানের জনক এই দরিদ্র ব্যক্তিকে। সে কারণে তাকে অবস্থানও বদল করতে হয়েছে।
শৈশব-কৈশোর কেটেছে জন্মস্থান পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। প্রায় এক যুগ ধরে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের নারকেলবাগানের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে তার বর্তমান আবাস।
পেশা বদলের সবশেষ ধাপে আব্দুস সাত্তার এখন বেছে নিয়েছেন হস্তশিল্পের কাজ। সুপারিগাছ কেটে তিনি তৈরি করেন দৃষ্টিনন্দন শো-পিসসহ নানা সামগ্রী। আর এজন্য তাকে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ধার করতে হয়নি। নিজের ইচ্ছাশক্তিই আবদুস সাত্তারকে এই কারু-কারিগরে পরিণত করেছে। নিজের আয় দিয়ে সংসার ভালোভাবে না চললেও, নজরকাড়া ডিজাইনের সব সামগ্রী তৈরিতে তার জুড়ি নেই। কুয়াকাটার বিভিন্ন দোকানেও বিক্রি হয় তার পণ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি আজন্মলালিত শ্রদ্ধাবোধ থেকে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও আবদুস সাত্তারের বিশেষ অনুরাগ। বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি নিজের শ্রদ্ধাবোধের দায় থেকে সাত্তার তার জন্য তৈরি করেছেন নান্দনিক শিল্পের একটি পাল তোলা নৌকা ও ইজি চেয়ার।
সুপারিগাছ কেটে টানা ছয় মাস ধরে এটি তৈরি করেন তিনি। তবে এতে কত ব্যয় হয়েছে- তা বলতে অস্বীকৃতি জানান সাত্তার। প্রতিদিন কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি কাড়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সাত্তারের তৈরি এ উপহার।
তিন ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা ও ১০ ইঞ্চি প্রশস্ত নৌকা এবং পাঁচ ফুট বাই আড়াই ফুট ইজি চেয়ারটি তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চান। এজন্য ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে একটি আবেদনও করেছেন সাত্তার।
নৌকা তৈরিতে তিনি সুপারিগাছ ছাড়াও এর পালে ব্যবহার করেছেন শামুক ও ঝিনুক। পালের সামনের অংশে ঝিনুকের ওপর খোদাই করেছেন বঙ্গবন্ধুর যুবক বয়সের একটি প্রতিকৃতি। শামুকের গায়ে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে কিছু লেখা। আর নৌকার মাথায় লাল-সবুজের পতাকা। নৌকা রাখার জন্যও তিনি সুপারিগাছ দিয়েই তৈরি করেছেন একটি শাপলা ফুলের স্ট্যান্ড।
আব্দুস সাত্তার জানান, দেশ স্বাধীনের পর দক্ষিণাঞ্চল সফরের অংশ হিসেবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাইস্কুল মাঠে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই দিন তাকে দেখে এবং তার আবেগভরা বক্তব্য শুনে আব্দুস সাত্তার বঙ্গবন্ধুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তখন আব্দুস সাত্তারের বয়স মাত্র সাত বছর। সেই শিশুবেলা থেকেই আব্দুস সাত্তার স্বপ্ন দেখছিলেন বড় হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করবেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করায় ভীষণ মর্মাহত হন সাত্তার। এ ঘটনায় জাতির জনক ও তার পরিবারের প্রতি আরো অনুরাগের জন্ম হয়। সেই বোধ থেকেই ৫৩ বছর বয়সে এসে বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে উপহার তুলে দেওয়ার গভীর বাসনা জাগে আব্দুস সাত্তারের মনে।
রাইজিংবিডি/৯ জুন ২০১৫/বিলাস দাস/সুমন মুস্তাফিজ/নওশের/কমল কর্মকার
রাইজিংবিডি.কম