ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ফরিদপুরে এক রাতে পদ্মায় বিলীন ১০ বাড়ি, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ

তামিম ইসলাম, ফরিদপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ১৩ জুলাই ২০২৪  
ফরিদপুরে এক রাতে পদ্মায় বিলীন ১০ বাড়ি, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ

ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের (ছবি: রাইজিংবিডি)

ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে পালডাঙ্গীতে পদ্মায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এক রাতের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন ১০ বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।  

এদিকে, স্থানীয়রা ওই বালিদস্যুদের ব্যবহৃত এক্সকেভেটর আটকে রেখে প্রতিবাদ করেন। বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় স্থানীয়দের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নদীতে বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়ায় তারা চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে গিয়ে দেখা যায়, শহররক্ষা বাঁধের কাছে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তুলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, প্রথমে বেকু দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ ঘেষে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে বালি তোলা হয়েছে।  এরপর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছিলো। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বেকু দিয়ে ওই বালি ট্রাকে করে বিক্রির সময় শহররক্ষা বাঁধসংলগ্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে মাঝরাত থেকে ভোর হওয়ার আগেই ১০টি বাড়ি বিলীন হয়।

যাদের ঘর বিলীন হয় তারা হলেন—আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, আলী, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ, জাহানারা বেগম। বাড়িঘর ছাড়াও বাঁশবাগান ও বেশকিছু গাছপালাও পানিতে ধসে গেছে। 

ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মো. হাসান মাস্টার বলেন, ৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এই বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে এসে আশ্রয় নেই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু স্থানীয় আজম নামে এক ব্যক্তি এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলে বিক্রি করছে। শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলার কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করায় উল্টো হুমকি দিচ্ছে তারা।

আফজাল শেখ বলেন, রাতের বেলায় ভেকু দিয়ে লেয়ার ধরে বালি তুলে নিয়ে যায়। তার জন্য আমাদের ঘর-দুয়ার সব ভাইঙ্গ্যা গেছে। টিউবওয়েল নাই, পায়খানা নাই, রান্নার জায়গাও নাই। সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে। কী যে বিপদে আছি। 

মজনু শিকদার বলেন, বেড়িবাঁধ থেকে দেড়শো ফুট জায়গা সরকারের। আমরা প্রায় ৫০টি পরিবার এখানে বাড়িঘর তুলে বসবাস করি। এই সরকারি জায়গায় ৫০ ফুট গভীর করে বালি তুলে নিয়েছে। এ কারণে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই বেড়িবাঁধও ভাঙার উপক্রম। 

তবে অভিযোগের বিষয়ে আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, অনেকদিন  ধরে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। যখন আমরা অভিযোগ দেই, তারপর দুই তিন দিন হয়তো বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। তবে এইবার তারা যা করছে তাতে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর মাত্র চারপাঁচ ফুট ভাঙলেই শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন ধরবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে। আর সেখানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

/ইভা/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়