ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইসকনের আস্তানা অপসারণ

নরসিংদী প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৪, ৩০ নভেম্বর ২০২৪  
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইসকনের আস্তানা অপসারণ

নরসিংদীর হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা অপসারণ করা হয়

নরসিংদী সদর উপজেলা হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে নরসিংদীর ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মাধ্যমে নদী ঘেঁষে গড়ে তোলা অনুষ্ঠানস্থল অপসারণের কাজ শুরু করে। বিকেলের মধ্যে বেশিরভাগ সামগ্রী তারা অপসারণ করে ফেলে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) জুমার নামাজ শেষে নরসিংদীতে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে মুসুল্লি ও ছাত্র-জনতা নরসিংদী পৌরসভা মোড়ে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে বিভিন্ন স্লোগানে হাজারও জনতার মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলস্টেশন মসজিদের সামনে এসে জড়ো হয়।

সেখানে এক সভায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা ইসকন-কে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, এ সংগঠনকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের বেশিরভাগ কার্যক্রম দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বিশ্বাসের ওপর আঘাত হেনেছে। পাশাপাশি নরসিংদী শহরের হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা উচ্ছেদের জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন মুসুল্লিরা।

তাদের এ দাবি বাস্তবায়ন না হলে জেলার তৌহিদি জনতা এর কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি দেন। পরে নরসিংদী ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে অনুষ্ঠানস্থল অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সকাল থেকে শ্রমিকদের মাধ্যমে অপসারণ কাজ শুরু করে। শ্রমিকরা ট্রাকে করে মালামাল সরিয়ে নিয়ে যায়।

নরসিংদী ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ প্রতীত পাবন নিমাই দাস বলেন, ‘‘মন্দিরের খালি না জায়গা থাকার কারণে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে এটা অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বেশিরভাগ অংশ সরিয়ে নেওয়া হয়। আর পানি কমে গেলে বাকিটুকু অপসারণ করা হয়। এখন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা নিজ উদ্যোগে এটা অপসারণ করেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কাজ সম্পাদনা করছি। প্রশাসন আমাদের সবসময় সহযোগিতা করছে।’’

হিন্দু বৌদ্ধ কল্যাণ ফন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব দীপক কুমার বর্মণ প্রিন্স বলেন, ‘‘এটা উৎসব উপলক্ষে অস্থায়ী স্থাপনা করে অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বিষয়টা সামনে চলে আসায় ইসকন নিজের ইচ্ছায় স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন, এলাকাবাসী ও আমরা সবাই এ কাজে সহযোগিতা করছি।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘নরসিংদী সম্প্রীতির শহর, আমাদের সম্প্রীতি বজায় থাকবে।’’

ইসকনের অনুষ্ঠানস্থল অপসারণের সময় ঘটনাস্থলে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসেন হেফাজতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমাবেশে কওমি মাদ্রাসা পরিষদ, ওলামা ও মুসল্লিদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে হাড়িধোয়া নদীর ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইসকনের আস্তানা অপসারণ করে জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইসকন হিন্দুদের কোনো সংগঠন নয়। হিন্দুদের কেউ এটার প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা ভারতের দালাল, বাংলাদেশের শত্রু ও স্বাধীনতার শত্রু এ কথা দেশবাসীর কাছে সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে।’’

নরসিংদী সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ আলম বলেন, এখানে নদীর তীরে ইসকনের অনুষ্ঠানের অস্থায়ী স্থাপনা তারা নিজেরাই অপসারণ করছে। আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্ন না ঘটে, এ জন্য পুলিশ এখানে অবস্থান করছে। 

ঢাকা/হৃদয়/বকুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়