ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গ্রীন সার্ভিসে বিপ্লব ঘটাচ্ছে ওয়ালটন

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রীন সার্ভিসে বিপ্লব ঘটাচ্ছে ওয়ালটন

ছবি : সৈয়দ রাজীব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : দেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইলস এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন এখন শুধু বিশ্ববাজারে প্রযুক্তির শীর্ষে যেতেই কাজ করছে না, সেই সঙ্গে পরিবেশের সর্বোচ্চ সুরক্ষায় গ্রীন সার্ভিসের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে।

ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এই গ্রিন সার্ভিসের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় কাগজ, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবহার রোধ এবং রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করছে।

বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে যেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নাই, সেখানে বাংলাদেশের ওয়ালটনের পরিবেশ সুরক্ষায় এমন পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে রোল মডেল হয়ে থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির এই ‘গ্রীন সার্ভিস কী এবং কেন’ তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

‘ওয়ালটন-মার্সেল ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার সম্মেলন এবং বার্ষিক পুরস্কার বিতরণীর এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন।



অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলুন উড়িয়ে এর উদ্বোধন করেন ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম বলেন, ‘ওয়ালটন এখন এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানটি শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবসা আর প্রযুক্তিগত শীর্ষে পৌঁছাতেই কাজ করছে না; বরং আমরা এখন ক্রেতাকে সর্বোত্তম সেবা আর বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষায় সবুজায়নের দিকে নজর দিচ্ছি। যদিও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ওয়ালটন ফ্যাক্টরির তার যাত্রাপথের প্রথমেই এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেছিল।’

‘যেমন ফ্যাক্টরির কোনো দূষিত পানি আমরা কোনো জায়গায় ফেলি না। এটা অনেক আগে থেকেই অর্থাৎ ফ্যাক্টরি যখন শুরু করেছি তখন থেকে মেইনটেইন করে আসছি। ইটিপি থেকে যে পানিটি বের হয়, সেটি আমরা গার্ডেনিংয়ে ব্যবহার করি, যেন পানির পুনঃব্যবহার হয়।’

এ সময় সম্পদের মিতব্যয়িতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পানি-বিদ্যুৎ যাতে অপচয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে শুধু যে আপনার বা কোম্পানির সাশ্রয় হয়ে তা কিন্তু নয়; বরং এর মাধ্যমে দেশ তথা বিশ্বের সম্পদের অপচয় হবে না এবং সুষম ও সঠিক ব্যবহার হবে।’

ব্যবসার পাশাপাশি ওয়ালটন এখন সামাজিক দায়বদ্ধতা আর ভোক্তা সেবাকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।



‘আমরা সবাই কাজ করি কিছু পাওয়ার আশায়। ,তা না হলে আমাদের চলবে না। এটি যদি আমরা সেবার মনোভাব নিয়ে করি, তাহলে একসঙ্গে দুটি কাজ হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কাজ করলাম, আবার মানুষের কল্যাণেও কাজ করলাম। শুধু উপার্জন করব তা না, মানুষের সেবার মনোভব নিয়ে কাজ করব।’  

‘ভোক্তা বা ক্রেতারাই সব এবং তাদের হাতে সর্বোচ্চে মানের পণ্যটি পৌঁছে দিতে ওয়ালটন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি তারা (ক্রেতা) খুশি থাকলে ওয়ালটনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’ এজন্য তিনি প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সেবা প্রদানকারী সবাইকে আন্তরিকতার সাথে গ্রাহকদের দ্রুত সর্বোত্তম সেবা প্রদানে নিয়োজিত রাখার আহ্বান জানান।

মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ভোক্তরা যাতে ওয়ারেন্টি কার্ড ছাড়াই দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা পান সেজন্য ডিজিটাল কাস্টমার ডাটাবেজ তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই প্রক্রিয়া বেগবান করতে গত বছর থেকে সারা দেশের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল ওয়ালটন। দ্রুতই এই সেবার আওতায় আসবে ওয়ালটন।’



তিনি বলেন, ওয়ালটনের বিক্রয়োত্তর সেবা আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে ইউরোপ থেকে এক ঝাঁক সেবাপ্রদানকারী উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ উৎপাদিত পণ্যের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। একই সঙ্গে দ্রুত ও নিখুঁত বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে অটোমেশনের প্রক্রিয়া চলছে।

ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন) এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘ওয়ালটন দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবেশের সুরক্ষার কথা আগে চিন্তা করে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘গ্রীন সার্ভিস’। এর মাধ্যমে আমরা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের বিষয়টি সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ করছি। কারণ, ওয়ালটন শুধু প্রযুক্তির উৎকর্ষে পৌঁছাতে এবং ব্যবসা করার মানসিকতা নিয়ে নেই, আমরা এখন পরিবেশের সুরক্ষায় আইডল হিসেবে কাজ করছি।’   

ওয়ালটন শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। বিক্রোয়োত্তর সেবায়ও ওয়ালটন সবচেয়ে এগিয়ে, জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ওয়ালটন যে বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে সেটি বেস্ট। আমরা বেস্ট ছিলাম, আছি এবং থাকব। ভবিষ্যতেও এই সর্বোত্তম সেবা অব্যাহত থাকবে।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. রায়হান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. এমদাদুল হক সরকার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইভা রিজওয়ানা, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তাপস কুমার মজুমদার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, ওয়ালটনের পিআর অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আলমগীর আলম সরকার, এডিশনাল ডিরেক্টর মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।        



গ্রীন সার্ভিস

গ্রীন সার্ভিসের মাধ্যমেও ওয়ালটন কীভাবে পরিবেশের সুরক্ষায় কাজ করছে অনুষ্ঠানে তার ব্যাখ্যা দেন প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি অপারেশন ডিরেক্টর আনিসুর রহমান মল্লিক।

তিনি বলেন, ‘গ্রীন সার্ভিস হচ্ছে এমন একটি সার্ভিস যা অপ্রয়োজনীয় কাগজের ব্যবহার রোধ করবে। এতে কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঠ সাশ্রয় হবে, কাঠ সাশ্রয় হওয়ায় গাছ কাটতে হবে না। অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুতের ব্যবহার রোধ করা যাবে। পানির পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে এর অপচয় যেমন রোধ হবে তেমনি দূষিত পানি পরিবেশ নষ্ট করতে পারবে না। রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে গ্রীন সার্ভিস। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী এবং ওজোন স্তর ধ্বংসকারী উপাদান সমৃদ্ধ গ্যাসের নিঃসরণ ও ব্যবহার কমানো যাবে।’  

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের মধ্য থেকে ২০১৮ সালের পারফরমেন্স বিবেচনায় ৩৫ জনকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।  




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জানুয়ারি ২০১৯/রেজা/সাইফ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়