ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চুরির অর্থ ফেরত আনতে চাপ সৃষ্টি করা হবে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চুরির অর্থ ফেরত আনতে চাপ সৃষ্টি করা হবে

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি) ফিলিপাইনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ  সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহেও সংস্থাটির সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

রোববার বাংলাদেশে সফররত এপিজির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ জাতীয় সমন্বয় কমিটি (এনসিসি) চেয়ারম্যান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে এপিজি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এপিজির মিউচুয়াল অ্যাভুলেশন ডিরেক্টর ডেভিড শ্যানন।

বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এপিজি প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এএমএল/সিএফটি ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ড্রাফট মিউচ্যুয়াল অ্যাভুলেশনের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে যে প্রতিবেদন জাতীয় সমন্বয় কমিটি অনুমোদন করে এপিজিতে পাঠিয়েছিল তা খুবই সংবেদনশীল, টাইম বাউন্ডেড ছিল। প্রতিবেদনটি এপিজির গাইডলাইনের ওপর ভিত্তি করেই প্রণীত হয়েছে। এক্ষেত্রে এপিজির সহযোগিতা সত্যি প্রশংসনীয়।

আইনমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিকভাবেই বর্তমান সরকার মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ। যেকোনো মূল্যে মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এপিজির গাইড মেনে চলা হবে। এ কারণেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বয়ে তৈরি অ্যাকশন প্ল্যান জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অত্যন্ত সুচারুভাবে মনিটরিং করেছে। সেসব ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকের শুরুতেই সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম স্ট্রাটেজিক ইম্লিমেন্টেশেন প্ল্যান (এসআইপি) বাস্তবায়নের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে এপিজি প্রদিনিধিদলের সহযোগিতার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন। এর আগে এপিজি মিশনের সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রতিনিধিদলের প্রধান। এ সময় তিনি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন বলে জানিয়েছেন। তবে কিছু কিছু বিষয়ে এখনো জোর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে সচিব তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

বৈঠকে বিআইএফিইউ প্রধান বলেন, অ্যাকশন প্ল্যানের যে ৯৯টি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সুপারিশ করেছিল তার বেশির ভাগই বাংলাদেশ সরকার প্রতিপালন করেছে। বিশেষ করে আইনের সংশোধন, আইনি সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও সক্রিয় করে তোলা, এএমএল প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা উইং প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে মানিল্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়েছে।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে এপিজি প্রতিনিধিদল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এ অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। এপিজি, এফইটএফ এবং এগমন্ট গ্রুপ বিশ্ব থেকে মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে যে যুদ্ধ করে যাচ্ছে তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি তার বক্তব্যে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কিছু টেকনিকাল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেন।

এপিজির পরিচালক ডেভিট শ্যানন ও মোস্তফা আকবর ৭-৮ জুলাই দুদিন ঢাকা সফরে এসেছেন। এপিজির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের তথ্য নিয়ে অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করে তা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫-২০১৬ সালে বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে যে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তার আলোকেই বাংলাদেশের সুপারিশগুলো প্রতিনিধিদলের কাছে উপস্থাপন করে। অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ সমন্বয়, ফলোআপ অ্যাসেসমেন্ট ও মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে প্রতিনিধিদলটি।

বৈঠকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থপাচার হওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিনিধিদল জানিয়েছেন, এপিজির বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সুইস ব্যাংক কিছু কিছু তথ্য দিচ্ছে। আরো বিস্তারিত তথ্য পেতে হলে দেশটির আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। এ বিষয়ে এপিজি কাজ করছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুলাই ২০১৯/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়