ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

শেয়ারবাজার গতিশীল করার দিক নির্দেশনামূলক বাজেট

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৪ জুন ২০২১   আপডেট: ০৯:১৬, ৪ জুন ২০২১
শেয়ারবাজার গতিশীল করার দিক নির্দেশনামূলক বাজেট

প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরে জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাজেট বৃক্ততায় দেশের শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সার্বিক দিক বিবেচনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেট শেয়ারবাজার বান্ধব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেটের এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আগামীতে শেয়ারবাজার আরও গতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার পুঁজিবাজার গতিশীল ও উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। যেমন— পুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করা, আধুনিক পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট সুসুক, ডেরিভিটিভ, অপশনের লেনদেন চালু করা, ওটিসি বুলেটিন বোর্ড চালু করা, ইটিএফ প্রচলন করা, ওপেন এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা ইত্যাদি। আর করপোরেট কর কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে অধিক সংখ্যক ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসবে।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে ২৫ শতাংশ ছিল। 

একইসাথে একক ব্যক্তি কোম্পানির কর ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৫০ শাতংশ ছিল। 

আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর অপরিবর্তিতভাবে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশই রাখা হয়েছে। আগামী বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের কর অপরিবর্তিতভাবে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশই থাকছে।

অপরদিকে তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির কর গত বাজেট অনুযায়ী আগামী বাজেটেও ৪০ শতাংশ থাকছে। তবে আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত মোবাইল ফাইন্যানসিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর ৫ শতাংশ বেড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সন্তোষজনক হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এটাকে ভালো বাজেট বলতে হবে। কারণ, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২২.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্ত কাছাকাছি গেছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। কর হার কমানোর ফলে দেশি-বিদেশি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। এছাড়া বন্ডের কর কমানোর বিষয়ে আমাদের দাবি ছিল। সেটিও বাস্তবায়ন হয়েছে। সুকুক বন্ডের রেজিস্ট্রেশনের সময় দ্বৈত করের ব্যবস্থা ছিল, সেটি কমানো হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ২ শতাংশ করা হয়েছে। এখন এসপিবি বন্ডে আর কর দেওয়া লাগবে না।’

 ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান রাইজিংবিকে বলেন, ‘আমার মতে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার বান্ধব বাজেট দিয়েছেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য আড়াই শতাংশ কর কমিয়ে দিয়েছেন। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, তামাক ও টেলিযোগাযোগ সেক্টরের জন্য এ সুবিধা পাচ্ছে না। ত‌বে অন্যান্য কোম্পানিগুলোর আর্নিং বেড়ে যাবে ও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে। এছাড়া বাজেট বক্তৃতায় শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে কিছু সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনার উল্লেখ রয়েছে। এ জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক বিষয়। তবে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করের ব্যবধান আমরা আরও প্রত্যাশা করেছিলাম। এ ব্যবধান না বাড়লে ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে কম আগ্রহী হবে।’ 

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মো. শরিফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনাকালে এ ধরনের বাজেট ব্রোকারদের আশান্বিত করেছে। কারণ, কোম্পানিগুলোর আড়াই শতাংশ কর কমানো হয়েছে। এখন থেকে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় আড়াই শতাংশ কর যুক্ত হবে। এটা শেয়ারবাজারে জন্য অনেক বড় বিষয়। এতে শেয়ারহোল্ডারা বেনিফিটেড হবেন। কোভিডকালিন এটা ইতিবাচক বাজেট। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইংজিংবিডিকে বলেন, ‘উন্নয়ন, গতিশীল ও উজ্জীবিত রাখাতে শেয়ারবাজার বান্ধব বাজেট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২.৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব অত্যন্ত ভালো। এতে  কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা আরও বাড়বে।’

ঢাকা/এনটি/এমএম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়