ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৭ ১৪৩১

‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা খুবই সহজ’

উদয় হাকিম, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০০:৩৫, ২৯ জুলাই ২০২১
‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা খুবই সহজ’

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ করা খুবই সহজ। সহজেই শেয়ার কেনা-বেচা করে মুনাফা তুলে নেওয়া যায় খুব সহজেই। এ কাজের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। যে কোনো বিনিয়োগকারী চাইলেই এখানে শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার ফরেন এক্সচেঞ্জ রুলস-রেগুলেশনের বিষয়ে খুবই নমনীয়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই বিনিয়োগের মাধ্যমে রেমিটেন্স নিতে পারেন। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং রেমিটেন্স নিন।’

বুধবার (২৮ জুলাই) আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির দি রিটজ-কার্লটন হোটেলের বলরুমে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) দ্বিতীয় পর্ব রোড শোতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজরসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনাকালে তিনি স্টেক হোল্ডারদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।

ওয়াশিংটনে এই রোড শো’তে সচিত্র প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় আরিফ খান বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের শেয়ারবাজারে লিকুইডিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে সর্বোচ্চ লিকুইডিটি রয়েছে। এতে ক্যাপিটাল মার্কেটের পরিধি বাড়তে সহায়তা করছে। গত অর্থবছর পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে যে, দেশের শেয়ারবাজার কি পরিমাণ পরফরমেন্স করেছে। গত বছর শেয়ারবাজারে ৫৪.০২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। আর চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২১.০৩ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। এটা যদি বহির্বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীন রির্টান হয়েছে বাংলাদেশের শেয়ারবজারে। ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শেয়ারবাজারের বাজার মূলধন। তবে আমাদের মার্কেটে ইক্যুইটির (শেয়ার) প্রভাব বেশি। এ জন্য বন্ড ও ট্রেজারি সিকিউরিটিজের পরিচিতি বাড়াতে এ রোড শো’র আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে দেশের শেয়ারবাজার দ্বিগুণ হারে প্রসারিত হবে। বাংলাদেশ সরকার শেয়ারবাজারের অগ্রগতি নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাই আশা করা যাচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

আরো পড়ুন:

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান জানান, বর্তমান প্রেক্ষপটে দেশের জিডিপিতে শেয়ারবাজার অবদান খুব বেশি নয়। তবে অদূর ভবিষ্যতে শেয়ারবাজার বড় অবদান রাখবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারের পরিধিকে কমপক্ষে আরও ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরকার সেই লক্ষে কাজ করছে। বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে ৭ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। গত ৭ বছরের এশিয়ার শেয়ারবাজারের পারফরমেন্স পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে গড়ে ১৫ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। বর্তমান বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বন্ড এবং ট্রেজারি সিকিউরিটিজের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একইসঙ্গে আরও ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছোট পরিসরে রয়েছে। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটির পরিসর দ্রুত বড় হবে বলে আশা করছি। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) নিয়ে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ও তার দক্ষ দল কাজ করছে। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরে মধ্যে দেশের শেয়ারবাজারে বড় আকারের ফান্ড আনতে সক্ষম হবো। সম্প্রতি বিএসইসি পুনর্গঠিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নতুন নতুন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিএসইসি আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল। এছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার রিটজ-কার্লটন হোটেলে রোড শোতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানসহ সরকারি বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আনতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমেরিকার চারটি শহরে সপ্তাহব্যাপী রোড শো’র আয়োজন করেছে। নিউ ইয়র্কে রোড শো’র প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৬ জুলাই। দ্বিতীয় রোড শো ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার (২৮ জুলাই) আয়োজিত হয়। লস এঞ্জেলসে আগামী ৩০ জুলাই তৃতীয় রোড শো’ শুরু হবে। ২ আগস্ট সিলিক্যান ভ্যালি সান ফ্রান্সিসকো তো আয়োজিত হবে চতুর্থ এবং শেষ রোড শো। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বড় শহরে সপ্তাহব্যাপী এই রোড শো’তে সহযোগী হিসেবে থাকছে বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট ওয়ালটন।

এমএম/এনটি/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়