ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বাড়ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ১৪ আগস্ট ২০২১  
সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বাড়ছে

ঋণের বিপরীতে দেশি-বিদেশি ব্যাংকের কাছে সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়েছে ১৩ হাজার ১৮২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ব্যাংক গ্যারান্টির শীর্ষে অবস্থান করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির কাছে সরকারের পুঞ্জীভূত ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৮৩৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছর (২০১৯-২০২০) শেষে ছিল ৬০ হাজার ৬৫৩ কোটি সাত লাখ টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি বেড়েছে ১৩ হাজার ১৮২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও এই খাতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, সার আমদানি, বাংলাদেশ বিমানের জন্য বোয়িং ক্রয়, জ্বালানি তেল আমদানি, কৃষি ঋণ বিতরণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা দেশি-বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থার কাছে গত ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব ঋণ নিয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ঋণের জন্য গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। এটি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। কোনো কারণে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঋণ সময়মত পরিশোধে ব্যর্থ হলে তা পরিশোধের দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়।

সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে একমাত্র টেলিযোগাযোগ খাত ছাড়া সব কয়টি খাতেই সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি বেড়েছে। ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার শীর্ষে রয়েছে বিদ্যুৎখাত। এ খাতে ১৬টি প্রকল্পের বিপরীতে পুঞ্জীভূত গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৬৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) ১৩টি প্রকল্পের বিপরীতে পুঞ্জীভূত গ্যারান্টির স্থিতি ছিল ৩৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি বেড়েছে সাত হাজার ৯৫০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এ সক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ঋণের কিস্তি পরিশোধের কারণে বিদ্যুৎ খাতের ১২টি প্রকল্পের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি আট হাজার ২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কমেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের জন্য এক্সিম ব্যাংক অব চায়নাকে দেওয়া ঋণের গ্যারান্টির স্থিতি চার হাজার ১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কমেছে। 

অন্যদিকে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রামপাল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা (সুপার ক্রিটিক্যাল) বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া ঋণের গ্যারান্টির স্থিতি বেড়েছে পাঁচ হাজার ৫২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এছাড়া তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সমাপ্ত অর্থবছরে ১০ হাজার ৪৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকার তিনটি নতুন ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এক্সিম ব্যাংক অব চায়নাকে দুই হাজার ৩৯১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যাংক অব চায়নাকে ৫০৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং আরপিসিএল-নরিনকো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যাংক অব চায়নাকে সাত হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে।

অন্যান্য খাতের মধ্যে কৃষিখাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রদত্ত ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৬৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুন শেষে এ খাতে ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি ছিল তিন হাজার ৬৮০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে স্থিতি বেড়েছে এক হাজার ২৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সার আমদানির জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআইসি) নেওয়া ঋণের বিপরীতে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রূপালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। 

২০১৯ সালের জুন শেষে এ খাতে ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি ছিল পাঁচ হাজার ৪৪৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে স্থিতি বেড়েছে ৯৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ বিমানের জন্য চারটি নতুন বোয়িং ও তিনটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ বিমান কেনা এবং বিমানকে চলতি মূলধনের জন্য জেপি মর্গান, ইউএস এক্সিম, এইচএসবিসি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ১৫টি প্রস্তাবের বিপরীতে দেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুন শেষে এ খাতে স্থিতি ছিল ১০ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে স্থিতি বেড়েছে ৬৩০ কোটি টাকা।

পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে আইটিএফসি থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নেওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুন শেষে এ খাতে স্থিতি ছিল এক হাজার ১৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে স্থিতি বেড়েছে ৩২৩ কোটি টাকা।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল ও ১৬টি পাটকলকে চলতি মূলধনের জন্য বিএসএফআইসি ও বিজেএমসি কর্তৃক ঋণ গ্রহণ, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্তৃক ঋণ গ্রহণ, সার আমদানিতে বিএডিসি কর্তৃক ঋণ গ্রহণ, বেজা কর্তৃক সিলেট অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি অধিগ্রহণের জন্য ঋণ গ্রহণ এবং টিসিবি কর্তৃক বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণসহ বিবিধ খাতের ৫৯টি প্রস্তাবের বিপরীতে দেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১৯৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

ঢাকা/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়