ঢাকা     সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৬ ১৪৩১

প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা চায় বস্ত্র খাত

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ৭ অক্টোবর ২০২১  
প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা চায় বস্ত্র খাত

বস্ত্র খাতের নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের জটিলতা দূর করে অন্যান্য খাতের মতো এ খাতেও সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফবিও মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা চায় চায় সংগঠন। এ বিষয়ে নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ওই চার সংগঠন।

বস্ত্র খাতের চার সংগঠনের সভাপতি যাদের মধ্যে দুজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তারা হচ্ছেন বিকেএমইএ সভাপতি এ.কে.এম সেলিম ওসমান, ইএবির সভাপতি আব্দুস সালাম মোর্শেদী, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক ওসমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি অর্থমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

চার সংগঠনের দাবি, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্রখাতে বিকল্প নগদ সহায়তা পরিশোধের ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যা ও হয়রানি নিরসনে বস্ত্রমূল্যের পরিবর্তে সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্বলিত নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এফই সার্কুলার-২৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরো জটিল হয়েছে বলে তারা অভিমত দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে নীটওয়্যার ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অপরিসীম। এ খাতের প্রতি সরকারেরও সুনজর ও সহানুভূতি রয়েছে।  সরকার নীট ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদানের কথা বিবেচনায় রেখে এবং দেশীয় পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের বিকাশের স্বার্থে বিগত কয়েকটি বাজেটেই দেশীয় সুতা ব্যবহারের বিপরীতে ৪ শতাংশ হারে বিকল্প নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রেখেছেন। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে।

এতে বলা হয়েছে, এই নগদ সহায়তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ১৯৯৭ সালে ২৫ শতাংশ দিয়ে শুরু হয়েছিল, যার ফলে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের বিশেষ করে নীটওয়্যার খাতের একটি শক্তিশালী পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে উঠেছে, দেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সুতাসহ আনুষঙ্গিক উপরকণ। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে জারি করা নগদ সহায়তা সংক্রান্ত সার্কুলার গুলোর অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক,অডিট, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ সংক্রান্ত সার্কুলারগুলোর নিজেদের মতো করে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা দেওয়ায় নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে রপ্তানিকারকরা নগদ সহায়তা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে পুরো কারখানা পুঁজি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অপরদিকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে তুলনামূলক কমদামে বিদেশ থেকে সুতা বা কাপড় আমদানিকেই নিরাপদ মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠা দেশের স্পিনিং মিলসহ পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পগুলো।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকারের দেওয়া সহায়তা পরিশোধের বিষয়ে রপ্তানিমুখী দেশিয় বস্ত্র/তৈরি পোশাক উৎপাদন ও এ সংক্রান্ত সার্কুলারগত জটিলতা দূর সম্পর্কিত এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সভায় বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ ও ইএবি’র পক্ষ থেকে  বস্ত্রখাতের নগদ সহায়তা পেতে বিভিন্ন সমস্যা, বিড়ম্বনা ও হয়রানির কথা তুলে ধরা হয় এবং সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি রপ্তানি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল।  সবকিছু শুনে অর্থমন্ত্রী সার্কুলারসমূহের জটিলতা দূর করে সহজ করার সিদ্ধান্ত দেন।  সরাসরি প্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশনা দেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বস্ত্রমূল্য নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা পদ্ধতি বিদ্যমান নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের এফই সার্কুলারে বলা হয়েছে ‘তন্তু হইতে সুতা ও পরবর্তী সব পর্যায়ের উৎপাদন বাংলাদেশে সম্পাদিত হয়েছে এরূপ রপ্তানির জন্যই কেবল নগদ সহায়তা প্রযোজ্য থাকবে। কিন্তু বর্তমানে নগদ সহায়তা প্রাপ্যতা নির্ধারনের ক্ষেত্রে হিসাবায়নের পদ্ধতিটি জটিল করে রাখা হয়েছে। এছাড়া সার্কুলারগুলোতে  ব্যবহৃত অপ্রয়োজনীয় ‘কম্পোজিট’ শব্দটিও হয়রানি এবং জটিলতা সৃষ্টির আরও একটি অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বস্ত্র খাতের শিল্প মালিকদের চার সংগঠনের নেতা, নগদ সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু করা বিভিন্ন সার্কুলারের শব্দগত জটিলতা ও অস্পষ্টতা দূর করার মাধ্যমে অন্যান্য সব খাতের মত বস্ত্র খাতেও সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

হাসনাত/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়