ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়ার ৫ কারণ

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২১ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ০৮:৪৪, ২১ আগস্ট ২০২৩
সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়ার ৫ কারণ

পাইপ লাইনে থাকা বৈদেশিক সহায়তার অর্থ সময়মতো ছাড় না হওয়াসহ ৫ কারণে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না বলে মনে করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। 

বাকি কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, অর্থের কার্যকর ব্যবহারে সক্ষমতার ঘাটতি, নিজেদের অগ্রাধিকার এবং আর্থিক বিধিবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহ করতে না পারা। এ পাঁচটি বিষয়কেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করছে ইআরডি। আর এসব কারণে বিদেশি সহায়তা প্রকল্পে ঠিকমতো ব্যবহার করা যায় না।

ইআরডির মতে, কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবিলায় বর্ধিত অর্থায়ন সংগ্রহ; স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়াকালীন চ্যালেঞ্জ; সহজ শর্তের (নমনীয়) বৈদেশিক ঋণ ও উৎসের সঙ্কোচন এবং এর কার্যকর ব্যবহারে সক্ষমতার ঘাটতিজনিত কারণেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না বা বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘসূত্রতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের উৎস বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে বর্তমানে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি), ‘সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন’ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে চিহ্নিত সমস্যাগুলো দূরীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়নের লক্ষ্যে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) সঙ্গে চলমান কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে।

অন্য দিকে বৈদেশিক সহায়তা ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে উন্নয়ন সহায়তাসংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত করার লক্ষ্যে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা এবং প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের চেকলিস্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া, এইড ট্রান্সপারেন্সি ও মিউচ্যুয়াল অ্যাকাউন্টিবিলিটি বাড়াতে উন্নয়ন সহযোগী কর্তৃক অনলাইনে তথ্য সরবরাহ এবং বৈদেশিক অর্থায়নের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ২টি ওয়েব-বেজড সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।

এদিকে ইআরডির পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গত ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এর আগের তিনটি অর্থবছরের তুলনায় বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। আলোচ্য তিন অর্থবছরে মোট দুই হাজার ৯৪২ কোটি ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বছরে প্রতিশ্রুতির গড় হচ্ছে ৯৮১ কোটি ডলার। অন্য দিকে একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৩১ কোটি ডলার। বছরে অর্থ ছাড়ের গড় হচ্ছে ৮৭৭ কোটি ডলার। এটি এর পূর্ববর্তী তিন অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ইআরডির উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ৫৭টি বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ৬০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায়। ৫৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করা এবং ৩৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বৈদেশিক দায় পরিশোধ করা। সংস্থার মতে, ধারণ ক্ষমতার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ সীমিত রাখার নীতি অব্যাহতভাবে অনুসরণ করার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত ডেট সাসটেইনেবিলিটির সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণমান সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

অন্যান্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- প্রকল্প বাস্তবায়নে চিহ্নিত সমস্যা দূরীকরণে ৩৬টি ত্রি-পক্ষীয় সভার আয়োজন করা এবং সভার সিদ্ধান্ত বাসতবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ; এলডিসি উত্তরণের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত এসটিএস উপকমিটি, যৌথ টাস্ক টিম, ওয়ার্কিং গ্রুপের ৯টি সভার আয়োজন করা ইত্যাদি।

ইআরডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাইপ লাইনে এখনও ৪০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তা পড়ে রয়েছে। কিন্তু এসব কারণসহ নানা শর্তের জন্য এ অর্থ ছাড় করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে সমস্যাগুলো নিরসন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন হার বাড়ানোর।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়