ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

ব্যয় যৌক্তিকীকরণ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:৫৩, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ব্যয় যৌক্তিকীকরণ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ

দেশের অর্থনীতি বর্তমানে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আর এ কারণে সরকারি ব্যয় যৌক্তিকীকরণ ও সার্বিক ঋণ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোকেই অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯-উত্তর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক বাজার এবং একই সঙ্গে এলডিসি-উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ এ ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। ফলে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যদিও ব্যয় কমাতে সরকার কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতি অনুসরণ করছে। আর ব্যয় বাড়ার কারণে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণও বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয় যৌক্তিকীকরণ এবং নগদ ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক ঋণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে আর্থ-ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও আর্থ ব্যবস্থাপনায় সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। 

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’(এপিএ)-তে এসব চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়া আরও কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর প্রক্ষেপণ প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করাটাও চ্যালেঞ্জ।

অর্থ বিভাগ মনে করছে, সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ার কারণে আগামীতে আর্থিক শৃঙ্খলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একটি দক্ষ আর্থিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

এ ছাড়া কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও করার কথা এপিএতে উল্লেখ করেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক বিভিন্ন চলকসমূহের প্রাক্কলন ও মধ্য মেয়াদি প্রক্ষেপণের পাশাপাশি টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক খাতের সার্বিক শৃঙ্খলা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বাজেট ও হিসাব রক্ষণ শ্রেণিবিন্যাস কাঠামোর কার্যকর বাস্তবায়ন ও আইবাস-এর পরিধি সম্প্রসারণসহ সরকারের আর্থিক নীতি সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি সেবা সময় মতো সঠিক উপকারভোগীর কাছে পৌঁছানো এবং সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

এ দিকে এপিএ-তে কিছু ইতিবাচক কথাও বলেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে, কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই হার ছিল যথাক্রমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া অর্থ বিভাগের এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫২১ জনকে বাজার চাহিদার উপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার নীতির সামঞ্জস্য বিধানে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো হালনাগাদকরণ। বাজেট ঘাটতি ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রেখে সরকারি ঋণ ধারণক্ষমতা সহনীয় পর্যায়ে রাখা। রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রকৃত অর্জনের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনা। আইবাস ব্যবস্থা সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন ইত্যাদি।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছি তা উত্তরণের জন্য চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে চলতি বছরটি একটি নির্বাচনী বছর। এ সময় খুব বেশি সংস্কার করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে সরকারের আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তার পরও চেষ্টা করা হচ্ছে অর্থনীতি সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য। চ্যালেঞ্জগুলো সামনে রেখেই সব কর্ম পরিকল্পনা হচ্ছে।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়