ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

খোলাবাজারে ডলার সংকট 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:১০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
খোলাবাজারে ডলার সংকট 

ঢাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হয় ডলার। ছবি: নাজমুল হক ফারুক

বেশি দামে ডলার বিক্রির অপরাধে কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সম্প্রতি স্থগিত ও সিলগালা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে ভয়-আতঙ্কে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলার বেচাকেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে খোলাবাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া ব্যাংকগুলো চাহিদার বিপরীতে ডলার যোগান দিতে না পারায় খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে আকাশচুম্বী।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। একইদিন গুলশান বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েও এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন:

এসব এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মানি চেঞ্জারের কর্মীরা বসে আছেন। কিন্তু বেচাকেনার কোনো কার্যক্রম নেই। যারা ডলার কেনার জন্য আসছেন, তাদের সরাসরি বলে দিচ্ছে ডলার নেই।

দিলকুশায় স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলারের দাম জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, আজ‌ ডলার রেট ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। ২০০ ডলার কিনবো বলতেই জানালো ডলার নেই। আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ ডলার কিনেছিলাম বিক্রি করে দিয়েছি। এখন কোনো ডলার নেই।

ঢাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হয় ডলার। ছবি: নাজমুল হক ফারুক

ফোনে ক্রেতার পরিচয় দিয়ে আরেক মানি চেঞ্জারে ফোন দিলে সরাসরি বললো ভাই ডলার নেই। কেউ এখন ডলার বিক্রি করছে না। আমরা না কিনতে পারলে বিক্রি করবো কিভাবে? গত কয়েকদিন বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে সবাই বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছে। আজ এখন পর্যন্ত কোনো ডলার বেচাকেনা করতে পারিনি।

মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা আব্দুল আউয়াল বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর যাব। খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে ডলার পাইনি। এখন মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ ঘুরেও ডলার নেই। পরে গুলশানের এক পরিচিত ভাইকে ফোন দিলাম ৫০০ ডলার ম্যানেজ করে দিতে। ও জানালো ১১৮ টাকা পড়বে। নিতে বলেছি কারণ দাম যাই হোক ডলার ছাড়া যাবো কিভাবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ডলার কেনাবেচা হচ্ছে। তবে সবাই যে বিক্রি করবে এমন নাও হতে পারে। কারণ অনেকের কাছে ডলার নাও থাকতে পারে। যাদের কাছে ডলার আছে তারা কেনাবেচা করছে। যার কাছে নেই সে কেনাবেচা করবে না এটাই স্বাভাবিক।

আজ সরেজমিন ঘুরে মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় মানি চেঞ্জারের বেচাকেনা করতে দেখা যায়নি। অনেকে বলছেন অভিযানের কারণে বিক্রি করছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, মানি চেঞ্জারগুলো একজনের কাছ থেকে কিনে অন্যজনের কাছে বিক্রি করে। এখন যে রেট দেওয়া আছে মানি চেঞ্জারগুলোর ডলার বিক্রি করতে হলে তাকে ১১০ টাকায় ডলার কিনতে হবে। যদি কেউ ১১২ টাকার নিচে ডলার বিক্রি না করে তাহলে মানি চেঞ্জারগুলো ডলার পাবে কিভাবে? ডলার না পেলে সে বিক্রি করতে পারবে না।

এতদিন খোলা বাজারে অনেক দামে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। এখন দাম কমে যাওয়ায় অনেকে ডলার বিক্রি করছে না। অপেক্ষা করছে বাড়ে কি না। তাই সরবারহ কম। তবে বাজারে যখন ডলার সরবরাহ বাড়বে তখন কেনাবেচাও বাড়বে। আর সরবারহ বাড়বেই কারণ কেউ ডলার নিয়ে ঘরে বসে থাকবে না। যাদের নগদ ডলার প্রয়োজন তারা কি করবে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, শুধু মার্কেটে না ঘুরে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নেবে।

ব্যাংকাররা জানান, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে ডলার খরচ করা যায়। এখন কার্ডে প্রতি ডলারের মূল্য ১১১ টাকা ৫০ পয়সা। যেখানে ব্যাংকে প্রতি ডলার ১১২ টাকা আর খোলাবাজারে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা।

এদিকে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে রেমিট্যান্স-রপ্তা‌নি আয়ে ডলারের দাম এক রেট করা হয়েছে। রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলারের ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পা‌চ্ছে। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আ‌য়ের দাম ৫০ পয়সা বা‌ড়ি‌য়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ‌ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পসয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।

উল্লেখ্য, বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে ডলার বিক্রি করায় গত সপ্তাহে ৭টি মানি চেঞ্জারের ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বেশি দামে ডলার লেনদেন করায় আরও ১০ মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

লাইসেন্স স্থগিত করা মানিচেঞ্জার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ইয়র্ক মানি এক্সচেঞ্জ, জামান মানি চেঞ্জিং হাউস, জেনি মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জ, মার্সি মানি এক্সচেঞ্জ, জেবি মানি এক্সচেঞ্জ ও বেঙ্গল মানি এক্সচেঞ্জ।

ঢাকায় বিক্রি হয় ডলার। ছবি: ইন্টারনেট

ব্যাখ্যা তলব করা ১০ মানি চেঞ্জার হলো–নিউ প্রাইম মানি চেঞ্জার, উত্তরা মানি চেঞ্জার, মিসা মানি এক্সচেঞ্জ, যমুনা মানি এক্সচেঞ্জ, পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জ, বুড়িগঙ্গা মানি এক্সচেঞ্জ, স্কাফ মানি চেঞ্জার, হযরত খাজা বাবা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, গ্লোরি মানি এক্সচেঞ্জ ও মাতৃক মানি চেঞ্জার। এছাড়া মতিঝিলের নিয়ন মানি চেঞ্জার এবং পল্টনের জনী ট্রেডার্সের বিষয়ে যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।

/এনএফ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়