ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের, বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১৯ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৭:৩৯, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের, বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি (৬৮১ মিলিয়ন ডলার) ডিসেম্বরে পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু আইএফএফ তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকের নানা বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে, যা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএফএম’র বোর্ডে পাঠাবে। আর বোর্ড ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠক পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক ডিসেম্বরে ঋণছাড় পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানান। অপরদিকে, আইএমএফ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিনিধিদলের কথা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনায় আমরা সবকিছুতে চুক্তিতে এসেছি। তাতে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আমরা পেতে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আইএমএফ’র সাথে আমাদের বেশ কিছু শর্ত ছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ আমরা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অবস্থার প্রেক্ষিতে গৃহীত উদ্যোগগুলোর মধ্যে আমরা কিছু সফল হয়েছি। তাছাড়া কিছু পূরণ হয়নি। আমরা আমাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছি। বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর উভয়পক্ষ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি। যেসব শর্ত পূরণ করা হয়নি, সেগুলো পূরণ করার ব্যাপারে কী কী উদ্যোগ নিতে হবে- সে ব্যাপারেও আমরা ঐক্যমত হয়েছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যায়, আগামী ১১ ডিসেম্বর আইএমএফ’র যে বোর্ড সভা আছে, সেই বৈঠকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন হবে। এরপরই ঋণের অর্থ পাব।

ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক

এক প্রশ্নোত্তরে মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু’একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি প্রকাশ করেছে। বিপিএমসিক্স অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া, মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময়হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।

আইএমএফ’র শর্ত রয়েছে, ডলারের বিনিময়হার বাজারের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নোত্তরে মেজবাউল হক বলেন, আমরা ডলারের একক দামে ইতোমধ্যে এসেছি। বাজারের উপরও ছেড়ে দেব। তবে এখনই না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার বাজারের উপর ছেড়ে দেব।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের একমাত্র পথ ঋণ আদায়। খেলাপি ঋণ আদায়ের শেষ প্রক্রিয়া হলো আইনের আশ্রয় নেওয়া। খেলাপি ঋণ কমাতে আমরা সেদিকেই যাব। ঋণ দেওয়ার সময় সঠিক প্রক্রিয়াতে দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা মহামারির ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে ঋণের কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যে কারণে খেলাপি ঋণ প্রত্যাশা মোতাবেক কমানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম শুরুর পর সফলতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখন ৬ শতাংশের বেশি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি ভাল আছে, এটাই আমাদের অর্জন।

এদিকে, আইএমএফ তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত আইএফএম প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে অবস্থান করে। তারা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধিদল এক্সটেন্ড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ), সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) এবং কনসোলেশন ২০২৩ আর্টিকেল পর্যালোচনা করেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল সুদহার (পলিসি রেট) ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। যা আর্থিক নীতি, বৃহত্তর বিনিময়হারে নমনীয়তা এবং কঠোর রাজস্ব নীতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে নিকটতম ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হ্রাস, মনিটরিং বাড়ানো, সুশাসন জোরদার করা এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোর উন্নতি আর্থিক খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

উল্লেখ্য, আইএমএফ বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ।

এনএফ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়