আমানত বিমা প্রিমিয়ামের তথ্য দাখিলে দেরি হলে জরিমানা

বছরে দুবার তফসিলি ব্যাংকগুলোকে আমানত বিমার প্রিমিয়ামের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। আর আমানত বিমা প্রিমিয়ামের তথ্য দাখিলে বিলম্ব ও কোনও ধরনের ভুল হলে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী জরিমানা ও অর্থদণ্ড দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে।  

মাস্টার সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা রক্ষা, সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধকরণ এবং এ খাতে শৃঙ্খলা বজায় রেখে সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ১৯৮৪ সাল হতে আমানত বীমা পদ্ধতি তথা ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স সিস্টেমম্স চালু আছে। বর্তমানে ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ অনুযায়ী দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক আবশ্যিকভাবে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের সাথে বিমাকৃত রয়েছে। এই আইনের ৫ নং ধারা অনুযায়ী সব তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে আলোচ্য তহবিলে প্রিমিয়াম জমা প্রদান করে। প্রিমিয়াম হিসাবায়নের লক্ষ্যে বর্তমানে প্রতি ষান্মাসিকে বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক হতে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী আমানত বিমা প্রিমিয়াম নির্ধারণী তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত তথ্য প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই পূর্বক নির্ধারিত প্রিমিয়াম হার প্রয়োগ করে ব্যাংকগুলোর জন্য আবশ্যিকভাবে প্রদেয় প্রিমিয়ামের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। ফলে, ব্যাংকগুলোর পাঠানো আমানত বিমা প্রিমিয়াম নির্ধারণী তথ্যগুলোর সুনির্দিষ্টতা নিশ্চিত করার জন্য ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট থেকে আগে জারি করা এ সংক্রান্ত সার্কুলার লেটারসমূহ একীভূত করে এই মাস্টার সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

মাস্টার সার্কুলারে আমানত বিমা প্রিমিয়াম নির্ধারণী তথ্য দাখিল সম্পর্কে বলা হয়েছে, সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য প্রস্তুত করতে হবে। প্রস্তুতকৃত সকল তথ্যের সফটকপি ও হার্ডকপি দাখিল করতে হবে।

তফসিলি ব্যাংকগুলোকে জানুয়ারি থেকে জুন ও জুলাই-ডিসেম্বর ষাণ্মাসিকের শেষ কর্মদিবসের হিসাবের স্থিতির ভিত্তিতে যথাক্রমে ৩১ জুলাই এবং ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট বছরের তথ্য দাখিল করতে হবে।

ভুল বা বিলম্বে তথ্য দাখিলের জন্য জরিমানা: ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য সম্বলিত বিবরণী দাখিল করলে ‘ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১’ এর ১০৯(২) ধারার বিধান বলে অর্থদণ্ড ও তদসংশ্লিষ্ট শাস্তি আরোপ করা হবে। 

বিলম্বে তথ্য প্রদানের জন্য জরিমানা: নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’ এর ১০৯(৭) ধারার বিধান বলে নির্ধারিত হারে জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হবে।

প্রিমিয়াম পরিশোধ: অত্র বিভাগ হতে প্রিমিয়াম প্রদানের জন্য পত্র জারির ১০ দিনের মধ্যে সব ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল অফিসের ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট বিভাগে সংরক্ষিত আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল হিসাবে নির্ধারিত প্রিমিয়াম জমা প্রদান করতে হবে। প্রিমিয়াম পরিশোধের সর্বশেষ দিন সরকারি ছুটির দিন হলে পরবর্তী প্রথম কর্মদিবসকে সর্বশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হবে।

প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে: বিমাকৃত কোন ব্যাংক প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থ হলে ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ এর ৫(৩) নং ধারায় বর্ণিত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে সমপরিমাণ অর্থ প্রিমিয়াম বাবদ কর্তন করে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলে জমা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিলম্বিত সময়ের জন্য প্রিমিয়ামের উপর ব্যাংক রেটে দণ্ডসুদ আরোপ করা হবে।

কোন বিমাকৃত ব্যাংক একাধিকবার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে, ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ এর ৬ নং ধারায় বর্ণিত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে শুনানির সুযোগ প্রদানপূর্বক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত সময়ের জন্য, আমানত গ্রহণ হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ হতে গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদন বা নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো রেগুলেটরি বিধিবিধান পরিপালনে যে কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন (সাময়িক/স্থায়ী), যা আমানত বিমা প্রিমিয়াম হিসাবায়নে প্রভাব রাখতে পারে, তা ব্যাংকসমূহ কর্তৃক যথাসময়ে অত্র বিভাগকে অবহিত করতে হবে।

এ নির্দেশনা জানুয়ারি-জুন, ২০২৪ ষান্মাসিকের জন্য ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ভিত্তিক তথ্য দাখিলের সময় হতে কার্যকর হবে। এই বিভাগের ২০১১, ২০১৩, ২০২০, ২০২১ সালের সংশ্লিস্ট সার্কুলার রহিত করা হয়েছে। তথ্য দাখিল ও প্রিমিয়াম প্রদান ব্যতিত অন্যান্য বিষয়ে আগে জারি করা ২০১২, ২০১৪ সালের সাকুলার কার্যকর থাকবে।