ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

পুঁজিবাজার

আট বছরে নারী বিও হিসাব কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ৮ মার্চ ২০২৪  
আট বছরে নারী বিও হিসাব কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার

দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে কাজ করছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে, বৈশ্বিক নানামুখী সংকটের কারণে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে, পুঁজিবাজারে পুরুষের পাশাপাশি নারী বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। সে হিসেবে গত আট বছরে পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৭টি।

পুঁজিবাজারের তথ্যভাণ্ডার হিসবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের মধ্যেও নিজেদের আয় বাড়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনেক নারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বিনিয়োগের আদর্শ ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভারতের নারীরা। করোনার মধ্যেও ভারতের নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ যেভাবে বেড়েছে, উল্টো চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। এখানে নারী বিনিয়োগকারীরা বেশ পিছিয়ে আছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি নারীদের এ খাতে বিনিয়োগে ভীতি বাড়িয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় না থাকায় নারীরা তাদের সঞ্চয় এখানে বিনিযোগ করার ঝুঁকি নিতে চান না। এছাড়া, বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে তুলনামূলক প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় পুঁজিবাজারে নারীরা কম আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ বিষয়ের ওপর পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডাররাও খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। তাই, এ সেক্টরে নারীদের অনীহা বেড়েই চলেছে।

নারীদের সঞ্চয় বাজারে বিনিয়োগ হিসেবে আনতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই), মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ সব স্টেকহোল্ডারের এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বছরজুড়ে নারীদের বিনিয়োগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা করতে হবে। এছাড়া, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নারীরা যে ঝুঁকিমুক্তভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন, তা প্রচার করতে হবে। একই সঙ্গে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ, এ ধারণা নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে নারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।

সিডিবিএলের প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে নারী নিয়োগকারীর সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছিল। পরবর্তীতে ধসের পর এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন প্রায় ২ লাখ নারী বিনিয়োগকারী। ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় বাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ে, তবে তা ২০১০ সালের মতো নয়।

২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ৮ লাখ ৬৫ হাজার ২৫০টি। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯২টিতে। ২০১৮ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত নারী বিও হিসাব কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৮টিতে। তবে, ২০১৯ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯২টিতে। তার পর থেকেই কমতে থাকে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা।

২০২০ সালের ৮ মার্চ নারী বিও হিসাব ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯১৮টি, ২০২১ সালের ৮ মার্চ নারী বিও হিসাব ছিল ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯০টি এবং ২০২২ সালের ৮ মার্চ নারী বিও হিসাব ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৪১টি। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত নারী বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬টি। ২০২৪ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত নারী বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২৩টিতে। সে হিসাবে গত ৮ বছরের দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৭টি বা ৫০.১০ শতাংশ। গত এক বছরের ব্যবধানে নারী ও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ২৪ হাজার ৭২৩টি বা ৫.৪২ শতাংশ।

চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের পুঁজিবাজারে পুরুষ ও নারীর মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪১টিতে। এর মধ্যে পুরুষ বিও হিসাবের সংখ্যা ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮টি এবং নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২৩টি। সে হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের পরিমাণ ২৪.৪১ শতাংশ। পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাবের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ নারীদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই, নারীদেরকেও বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এজন্য বিআইসিএম ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ভূমিকা পরিবারে অনেক বেশি। তাই, পরিবারে মাকে যদি শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। তাই, দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারকে উন্নত করার লক্ষ্যে মায়ের বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সে লক্ষ্য নিয়েই বিআইসিএম কাজ করছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিআইসিএম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষা কর্মশালা করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বছরজুড়ে করবে বিআইসিএম।

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের (বিএএসএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে নারীদের কীভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিএএসএম ইতোমধ্যে নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গত ৫ ও ৬ মার্চ বিএএসএমের নিজস্ব কার্যালয়ে নারী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিএএসএম।

এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়