বিডিং শুরু রোববার
সুনাম-সম্ভাবনা বিবেচনায় টেকনো ড্রাগসে আছে বিনিয়োগের সুযোগ
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে টেকনো ড্রাগস লিমিটেড। আইপিও প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের কাট-অব প্রাইস (প্রান্তসীমা মূল্য) নির্ধারণ করার লক্ষ্যে বিডিংয়ের (নিলাম) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে এ বিডিং কার্যক্রম চলবে বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ বিডিং কার্যক্রমে অংশ নেবেন প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর্থিক সক্ষমতা, সুনাম ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনা করে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে টেকনো ড্রাগস কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অগ্রগতি নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে এমন প্রত্যাশার কথা জানান টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব দেবাশীষ দাশ গুপ্ত।
তিনি বলেন, ওষুধ রপ্তানিতে দেশের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে অন্যতম টেকনো ড্রাগস লিমিটেড। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি ওষুধ রপ্তানির মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে। এ সুনাম ধরে রাখাই কোম্পানিটির মূল উদ্দেশ্য। দেশে ভালো মানের কাচাঁমাল আমদানি করে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করাই কোম্পানিটির মূল চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, নরসিংদী ফ্যাক্টরির ব্যালেন্সিং মডার্নাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন (বিএমআরই), গাজীপুর ফ্যাক্টরির ভবন নির্মাণ এবং আংশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে। এতে কোম্পানিটির উৎপাদন ও বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডাররা লাভবান হবেন।
কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দেবাশীষ দাশ গুপ্ত বলেন, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রয় করছে এবং লাভজনক কোম্পানি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানির বেশকিছু স্পেশালইজড প্রোডাক্ট রয়েছে। তাছাড়া, কোম্পানিটি হিউম্যান এবং ভেটেরিনারি মেডিসিনের প্রায় সকল প্রকার ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। যেটা কোম্পানিটির ভবিষৎ অগ্রগতির পথ আরো সুগম করবে। বর্তমানে কোম্পানির মোট মূলধন প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ৬৩ শতাংশসহ পরিচালন পর্ষদের কাছে ৮৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বর্তমানে যে দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাতে ভবিষ্যতে কোম্পানি আরও সাফল্য অর্জন করবে। তাই, বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানিতে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কোম্পানিটির ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
কোম্পানিটির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা প্রসঙ্গে কোম্পানি সচিব বলেন, টেকনো ড্রাগস শুরু থেকেই উন্নত মানের বিশেষায়িত ওষুধ উৎপাদন ও বিতরণ করে আসছে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের টেন্ডারের বিপরীতে সর্বোচ্চ পরিমাণ জন্মনিয়ন্ত্রন ওষুধ সরবরাহ করছে এ কোম্পানিটি। কোম্পানিটির ১৭টি ডিপো রয়েছে, যার মাধ্যমে সারা দেশে ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ কোম্পানির রয়েছে প্রতিটি স্তরে ‘সার্বক্ষণিক মনিটরিং টিম’। তারা কোম্পানিটির প্রতিটি কাজের সঠিক মনিটরিং নিশ্চিত করে থাকে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একজন ফামার্সিস্ট। তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এদিকে, কোম্পানির একজন পরিচালক অনকোলোজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। করপোরেট গভর্নেন্সের পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আইপিও তহবিলের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান, সবোর্পরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ ওষুধ রপ্তানির মাধ্যমে দেশের সুনাম অর্জন করাই কোম্পানিটির মূল উদ্দেশ্য। কোম্পানিটি ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেসন ও জিএমপিসহ অন্যান্য রেগুলটরি গাইডলাইন মেনে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন ও বিতরণ করে থাকে।
বিভিন্ন প্রোডাক্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত বিশেষায়িত প্রোডাক্ট নিয়েই কাজ করছে টেকনো ড্রাগস। অনকোলোজির কেমোথেরাপি, চেতনানাশক ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রন পিল, ইনজেকশন এবং সবার্ধুনিক প্রযুক্তি ইমপ্ল্যান্ট স্টিক (৫ বছরের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ) উৎপাদন করছে এ প্রতিষ্ঠান। এসব বাংলাদেশে একমাত্র টেকনো ড্রাগসই উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও ভেটেনারি ও সাধারণ হিউম্যান মেডিসিনও রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো। তবে, এলসি সমস্যা, ব্যাংক সুদ হার বেশি, সর্বোপরি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ভালো মানের ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করে মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেওয়াটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
প্রসঙ্গত, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ২০০৯ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। তবে, কোম্পানিটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ২০১০ সালের ১ জুলাই। কোম্পানিটি প্রথমে যাত্রা শুরু করে ভেটেনারি প্রোডাক্ট দিয়ে। দেশে ভেটেনারি প্রোডাক্টের প্রবর্তক টেকনো ড্রাগস। পরবর্তীতে মানুষের ওষুধ নিয়ে কাজ শুরু করে। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ওষুধ রপ্তানিতে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটি ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, পুনর্মূল্যায়নসহ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ২৭.৭৪ টাকা এবং পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া ২২.৫৭ টাকা। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২.০৮ টাকা। বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৩.২৫ টাকা।
চলতি বছরের গত ৭ মার্চ টেকনো ড্রাগস লিমিটেডকে আইপিওর অনুমতি দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর আগে, ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রোড শো আয়োজন করে টেকনো ড্রাগস। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের সামনে কোম্পানির আর্থিক চিত্র ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড এবং ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।
এনটি/রফিক