বাজেট অধিবেশন শুরু বিকেলে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন শুরু আজ (৫ জুন)। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এই অধিবেশন আহ্বান করবেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। এটা হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার এবং বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। এই বাজেট অধিবেশন হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে এই সরকার ক্ষমতায় আসে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ৮ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেট হবে দেশের ৫৩তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ৬ মেয়াদে ২৫তম বাজেট। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন।
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার।’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার আকার হবে প্রায় ৩২৯ পৃষ্ঠা। এর আগে এত বড় বাজেট বক্তৃতায় আর প্রণয়ন করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীকে এত বড় বাজেট বক্তৃতা হয়তো পড়তে হবে না। বাজেটের একটি সার-সংক্ষেপ তিনি সংসদে পাঠ করবেন। জানা গেছে, বাজেটের আকার খুব বেশি সম্প্রসারণ করা হয়নি। অর্থ সংকটই এর মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে নতুন বাজেটের আকার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সচারচর বাজেটের এই প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ হয়ে থাকে। নতুন অর্থবছরের বাজেট চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে চার শতাংশের একটু বেশি। প্রথমদিকে বাজেটের আকার আট লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এত বড় বাজেট বাস্তবায়নে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা সংকুলান করা রীতিমত দূরহ হয়ে পরবে বিধায় এর আকার যাতে কোনো অবস্থায় আট লাখ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করতে না পারে তা জন্য সীমারেখা টেনে দেওয়া হয়। তাই চূড়ান্ত পর্যায়ে আট লাখ কোটি টাকার নীচেই বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়।
সূত্র জানায়, বাজেট বক্তৃতা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন অর্থ বিভাগের দু’জন অতিরিক্ত সচিব। তাদের তত্বাবধানে এটি তৈরি করা হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে এই বক্তৃতায় পরামর্শ হিসেবে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও বাজেটের প্রথমাংশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হবে। থাকবে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য ঊধ্বর্গতির কথাও। এগুলোর জন্য দায়ি করা হবে কোভিড পরবর্তী ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধকে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাজেটে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলেও ধরে হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের ‘জিপিএফ’ থেকে নেওয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে ঋণের আসল পরিশোধে ব্যয় করা হবে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও সিংহভাগ আয় করার দায়িত্বটি থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতিত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি(জিডিপি) ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ)।
নতুন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপি’র আকার করা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার কমানো হয়েছে মূল বাজেটের থেকে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের বাজেটের ৪০ শতাংশ বরাদ্দ যাবে ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে সরকার এই তিন খাতে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে। সরকারকে আগামী বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ। আর এতে করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো কঠিন হবে। বাজেট থেকে এই তিন খাতে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা