ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

গাবতলীতে লাখ টাকার নিচে মিলছে না ভালো গরু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৩:৪০, ১২ জুন ২০২৪
গাবতলীতে লাখ টাকার নিচে মিলছে না ভালো গরু

ছবি: রাইজিংবিডি

ঈদুল আজহার বাকি ৪দিন। আগামী ১৭ জুন এই ধর্মীয় উৎসবে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন মুসলিম সম্প্রদায়। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে কোরবানির পশু।

বুধবার (১৩ জুন) রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে ঘুরে ইজারাদার-বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু বাজারে আসলেও দাম চড়া। ৮০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার নিচে কোনো ভালো গরু নেই বাজারে। সেসব গরু যে খুব বড়, তাও নয়। তবে বৃহস্পতিবারের (১৩ জুন) মধ্যে গরুর দাম কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গাবতলীতে নিয়মিত পশুর পাশাপাশি গত ৪-৫ দিন থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার খামারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। কোরবানির পশু এসেছে বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। বাজারে ক্রেতা সমাগম থাকলেও এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি সেভাবে। ক্রেতারা বাজার ঘুরে দেখছেন, গরু পছন্দ করছেন, সার্বিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন। তবে কাল-পরশু বাজার জমে উঠবে বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

খামারি ও বিক্রেতারা বলছেন, সারা বছর গরুর পেছনে খামারিদের যে খরচ, কষ্ট, যত্ন এসব সম্পর্কে ক্রেতাদের তেমন ধারণা নেই। তাই, না বুঝে তারা গরুর দাম বলছেন। এখনও ক্রেতারা আসলে বাজার যাচাই করছেন। অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। আজ যে গরুর দাম ৯০ থেকে এক লাখ চাচ্ছেন, কাল-পরশু সেটা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে মনে করছেন মিরপুর সনি সিনেমা হল এলাকা থেকে গরু কিনতে আসা হাফিজুর রহমান।

মোহাম্মদপুর থেকে আসা তুষার কিনেছেন মোটামুটি সাইজের একটা গরু। হাসিল ঘরের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের আগের দুদিন বেশ ঝামেলা হবে, তাই একটু আগেই কিনলাম। তিনি কিনেছেন ৮৬ হাজার টাকা দিয়ে। 

বিক্রেতা বলেছেন, ৯০ কেজির বেশি মাংস হবে এই গরুর। তুষার বলেন, সর্বোচ্চ ৭৫ কেজি হতে পারে। তুলনামূলক এবার গরুর দাম বেশি বলেও মনে করেন তিনি।

ধানমন্ডির রাসেল আহমেদ কালো রঙের মাঝারি আকারের একটি গরু কিনেছেন ১ লাখ ৭ হাজার টাকা দিয়ে। নিজের বাড়ি, তাই গরু রাখার সমস্যা নেই বলেও জানান তিনি। ব্যাপারী বলেছেন, সাড়ে তিন মণ মাংস হবে।

তিনি বলেন, ব্যাপারী-খামারিরা এখনও গরু ছাড়তে চাচ্ছেন না, দাম অনেক বলছে। সকাল ৯টায় এসেছি, দুই ঘণ্টা ঘুরে গরু কিনেছি। আর দুদিন পর কিনলে হয়তো ৯০-৯৫ হাজারে কিনতে পারতাম। ঈদের আগে দাম কমবে। তারপরও ঝামেলা এবং ভিড় এড়াতে আজ কিনলাম।

অন্যদিকে, রাসেল আহমেদের কেনা গরুর খামারি উল্লাপাড়ার রিমন হোসেন ১ লাখ ৭ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করে খুশি নন। তার দাবি, গাবতলী হাটে এনে তিনি তার কাঙ্খিত দাম পাননি। এর থেকে এলাকার হাটে বিক্রি করলে আরও ভালো দাম পেতেন বলে মনে করেন তিনি।

আরেক খামারি পাবনার সুজন হালদার বলেন, সারা বছর ধরে নিজের বাড়িতে পালন করা ১০টি গরু নিয়ে এসেছি। গতকাল একটা এবং আজ আরেকটা গরু বিক্রি করলাম মোট ২ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এখানে গরু নিয়ে এসে যে ভুল করেছি তা বলার নয়। অযথা গাড়ি ভাড়া দেওয়া লাগলো। ভবিষ্যতে ঢাকার হাটে আর গরু নিয়ে আসবো না। এত দূরে কষ্ট করে, খরচ করে এনে কোনো লাভ নেই। বরং ঈদের আগে লস করে বাড়ি ফিরতে হয়।

বাড়িতে পালন করা ১৫টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন কুষ্টিয়ার ব্যাপারী মিজান মোল্লা। একটু বড় আকারের এসব গরু নিয়ে গাবতলী হাটে আসেন তিনি। গরুগুলোর বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বলে জানান তিনি। এসব গরুর মধ্যে একটা গরুর প্রায় ১৬-১৭ মণ মাংস হবে বলে জানান এই ব্যাপারী। এই গরুটি ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

ক্রেতাদের অভিযোগ এবার গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন ব্যাপারীরা-এমন প্রশ্নের জবাবে মিজান মোল্লা বলেন, ক্রেতারা আমাদের কষ্ট বোঝেন না। গরু পালনে কত খরচ হয় এটাও তারা জানে না। গরুর খাবারের দাম বেশি, শ্রমিক রাখলে তাদের বেতনও বেশি। গরুপ্রতি দিনে খরচ হাজার-বারোশ টাকা। তাহলে মাসে খরচ কত আপনারাই বলেন! এছাড়া বিদ্যুৎ, সাবান, শ্যাম্পু, মশার কয়েল এসবের খরচও আছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে কোরবানির পশু সাধারণত ঈদের এক থেকে দুইদিন আগে বেশি বিক্রি হয়। এখন যেসব গরু বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ ক্রেতারই নিজেদের বাড়ি বা গরু রাখার জায়গা আছে। পাশাপাশি, ঢাকার আশপাশের কেরানীগঞ্জ, সাভারের বাসিন্দা-যাদের বাড়িতে খোলামেলা খালি জায়গা পড়ে আছে, তারাই মূলত গরু কিনছেন এখন। ঢাকা শহরে অধিকাংশ মানুষ ভাড়া ও ফ্ল্যাট বাসায় বসবাস করেন। কোরবানির গরু রাখার স্থানের বড় সংকট বলে তারা শেষ সময়ে কোরবানির পশু কেনেন।

হাটে গরুর দাম চড়া হলেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশে গরু-ছাগলের ঘাটতি নেই বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান। মন্ত্রী বলেন, দেশে এবারে ঈদে কোরবানির পশুর কোনো ঘাটতি নেই। গত বছর প্রায় পাঁচ লাখ গবাদিপশু অবিক্রীত ছিল। এ বছর তার সঙ্গে আরও সাড়ে চার লাখ পশু যোগ হয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদা এক কোটি ২৯ লাখ পশু, সেখানে আছে এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এবারের ঈদে মোট ২০টি হাট ইজারার দরপত্র আহ্বান করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটসহ ৯টি হাট বসাতে চেয়েছিল ডিএনসিসি। এছাড়া ডিএসসিসি চেয়েছিল সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি পশুর হাট বসাতে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনাসহ নানান কারণে অস্থায়ী হাটের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে আফতাবনগরে হাট বসানো নিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশন দরপত্র আহ্বান করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় তা বন্ধ রয়েছে।

/এমএ/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়