ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

বাজেট পাস হচ্ছে আজ, থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ৩০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৩:২৭, ৩০ জুন ২০২৪
বাজেট পাস হচ্ছে আজ, থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হচ্ছে আজ। 

রোববার  (৩০ জুন) বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। 

জাতীয় সংসদে পাস হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগান নিয়ে এবারের বাজেটের আকার  ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের ৫৩তম এই বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

আরো পড়ুন:

গত ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

এবারের সামগ্রিক বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

সংসদ ও অর্থ মমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে কালোটাকার মালিকরা তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাদের অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী দেশের প্রচলিত আইন যা-ই থাকুক, কোনও করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

এই বাজেট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতিমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এবারের বাজেটে সোমবার (১ জুলাই) থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর-পরবর্তী পেনশন-সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এই স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকাই বহাল থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আয়ের প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী তিন লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন বাজেটে ১৫টি খাতে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। খাতভিত্তিক জনপ্রশাসন খাতে এক লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা, সুদ খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এক লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৩৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, গৃহায়ণ খাতে ৬ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা; বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৮ হাজার ৫৭৬ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৮ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা করার বিষয়টি সরকার চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা।

বর্তমানে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক ও কর অব্যাহতি থাকলেও নতুন বাজেটে তা থাকছে না। এ সুবিধা কমিয়ে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত প্রস্তাব বহাল থাকছে।

আগামী অর্থবছরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ৪ হাজার ৩২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব ফ্ল্যাট নির্মাণের পর স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার ৮৫৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্যের ওপর উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, লবণ ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহকারীরা ঋণপত্রের ওপর কর হার ১ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগতে থাকা গ্রাহকরা কিছুটা স্বস্তি পাবে। 

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আমরা এমন এক সময়ে প্রণয়ন করছি যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ নানা বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতিসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে ইতোমধ্যে সংকোচনমূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে; নীতি সুদহার (রেপো) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে ৮.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ব্যাংক সুদের হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। তাছাড়া রপ্তানি উৎসাহিতকরণ এবং প্রবাস আয়ে গতি সঞ্চারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করেছি, যেমন বাজেট ঘাটতি হ্রাসকরণ, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ। আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।

আসাদ/ইভা

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়