যোগদানের আগেই বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে চক্রান্ত
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ। তবে তিনি কাজে যোগদান করার আগেই বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রোষানলে পড়েছেন। ইতোমধ্যে তার নিয়োগ বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
গত রোববার (১১ আগস্ট) বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। এর এক দিন পর সোমবার (১২ আগস্ট) পদত্যাগ করেন সংস্থাটির দুজন কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম। চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদত্যাগের পর পুঁজিবাজার অনেকটা নেতৃত্বহীন অবস্থায় চলছিল। অভিভাবকহীন এ অবস্থা থেকে দেশের পুঁজিবাজারের হাল ধরতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সার্বিক দিক বিবেচনা করে মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
তবে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাচ্ছে না। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন পূর্বনির্ধারিত সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসরুর রিয়াজকে চেয়ারম্যান হিসেবে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে। ওই সভায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান। এতে নির্বাহী পরিচালক মাহবুবের রহমান চৌধুরী, কামরুল আনাম খান, রেজাউল করিমসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘সদ্য নিয়োগকৃত বিএসইসির চেয়ারম্যান বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যদের মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়-মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন মারফত জানা যায়, ড. এম মাশরুর রিয়াজকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার নিয়োগ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, তিনি সালমান এফ রহমানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী তিনি বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামেরও ঘনিষ্ঠ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত হয়, সদ্য বিদায়ী সরকার এবং সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে কমিশনে যোগদানকে কমিশনের কর্মচারীরা স্বাগত জানাবে না।’
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র নই। তবে বিএসইসির মুখপাত্র হিসেবে বলতে পারি, সরকার যেহেতু এম মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, আমরা তাকে নিয়ে কাজ করতে চাই। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে চাই।’
এদিকে, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। আমার মনে হয়, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আগে বিএসইসিতে যোগদান করি। তারপর সবার মতামতের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একত্রে কাজ করব।’
প্রসঙ্গত, মাসরুর রিয়াজ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া তিনি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরে এমবিএ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিয়ন্স ইউনিভার্সিটি থেকে।
/এনটি/এসবি/