জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা
এক বছরের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি। শতকরা হিসাবে যা ২২০ শতাংশ। বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপকে বিভিন্ন ভাবে ঋণ দেয়ার কারণে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে জানা গেছে।
জনতা ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণের হার এখন ৩০ শতাংশ। ব্যাংকিং ভাষায় যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, গত অর্থবছর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ১৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকটির পক্ষে সম্ভব হয়নি।
গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জনতা ব্যাংকের প্রতি প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের স্থিতি চিত্রে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ছিল ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
বিপুল পরিমাণ এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে সমাপ্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায় করেছে ৪০০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর শেষে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায় করেছে ৭৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
এ দিকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের এপিএ-তে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। আর খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা এবং অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ৬৫ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ‘ব্যাসেল-৩’-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূলধন পর্যাপ্ততার হার (সিআরএআর) মানসম্মত পর্যায়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি; ঋণের অতি মাত্রায় কেন্দ্রিভূতকরণ; মামলা নিষ্পত্তিতে ধীর গতি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সাথে অসম প্রতিযোগিতা- এগুলো ব্যাংকটির অন্যতম সমস্যা।
জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৫৭ শতাংশ অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, রতনপুর ও এস আলম গ্রুপসহ সাতটি বড় কোম্পানির। ব্যাংকটির ২৫ হাজার ৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে এই সাত বড় কোম্পানির খেলাপির পরিমাণ ১৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অ্যানটেক্সের ৭ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, রতনপুর গ্রুপের ১ হাজার ২২৭ কোটি টাকা, এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা এবং রিমেক্স ফুটওয়্যারের ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আছে।
গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকে লোকসানি শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫টি। গত মার্চে এ সংখ্যা ছিল ১১৩টি। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসানি শাখার সংখ্যা কমেছে ৬৮টি। এ ছাড়া রিট মামলা নিষ্পত্তিতে এপিএ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এগিয়ে আছে জনতা ব্যাংক। গত অর্থবছরে ৪০টি রিট মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৯টি; ১৭০টি অর্থঋণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৯৩টি এবং ১ হাজার বিভাগীয় ও অন্যান্য মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার ২৪৯টি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
হাসনাত/ফিরোজ