ঢাকা     সোমবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে: গভর্নর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৮, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২২:৪২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে: গভর্নর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর (ফাইল ফটো)

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে। ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। ফলে, অনেক ব্যাংক তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে। এজন্য আমরা সঙ্কটে থাকা ৮ ব্যাংককে প্রয়োজন অনুযায়ী তারল্য সহায়তা দিতে বলেছি। গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা সীমিত পরিসরে তারল্য সহায়তা দিতে চাই। সরকার আমানতকারীর কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন তিনি। এ সময় ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নর বলেছেন, আমরা নতুন টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেবো না। কারণ, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে গেলে এখন ২ লাখ কোটি টাকা ছাপিয়ে দিতে হবে। এতে দেশের মুদ্রাবাজার, বিদেশি মুদ্রার বাজার, মূল্যস্ফীতিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এজন্য সঙ্কটে থাকা ৮ ব্যাংককে প্রয়োজন অনুযায়ী তারল্য সহায়তা দিতে বলেছি।

তিনি বলেন, আপতত এসব ব্যাংক কোনো ধরনের ঋণ বিতরণ করবে না। শুধু আমানতকারীদের কিছু কিছু টাকা ফিরত দেবে। তবে, এতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আমরা আমানতকারীদের অধিকার সংরক্ষণ করব। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সময় দিতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশ থেকে আট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। এতে এসব ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমরা সীমিত পরিসরে তারল্য সাপোর্ট দিতে চাই। সরকার আমানতকারীর কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে। এ ব্যাংকগুলোতে বহুদিন ধরেই সমস্যায় ছিল। আমানতকারীরাও তা জানত। তারপরও বিভিন্ন লোভে আপনারা সেখানে টাকা রেখেছেন। এজন্য লুটপাট করা সহজ হয়েছে। তবু, আমরা আমানতকারীর স্বার্থটা দেখব, যাতে তারা অর্থ ফিরে পান।

তিনি বলেন, আমরা আমানতকারীদের অনুরোধ করব, আপনারা একসাথে টাকা উত্তোলন করবেন না। আপনাদের প্রয়োজনমতো টাকা উত্তোলন করুন। আমাদের কিছুটা সময় দেন। আমরা আশা করি, ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে, এই ৭ থেকে ৮টা ব্যাংকের কারণে পুরো ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

গভর্নর বলেন, পাচারকারীদের দেশের মধ্যে থাকা সম্পদ উদ্ধার করব। প্রথমে আমরা এ উদ্যোগ নেবো। পাশাপাশি, বাইরের দেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়েও সহায়তা চেয়েছি কয়েকটি দেশের কাছে। বাইরের টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উচ্চ আশা করব না, তবে শক্তভাবেই আমরা ধরব।

তিনি বলেন, পাচারকারীরা মূলত দুবাই, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করেছে। এজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে এসব দেশ থেকে টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নেবো। বিদেশি পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আমরা তাদের সহায়তা নেবো।

এদিকে ব্যাংক সংস্কারে তিনটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাত অনেটাই ভঙ্গুর। এটা ঠিক করতে আমাদের ব্যাপকভাবে কয়েক বছর পর্যন্ত কাজ করতে হবে। এর সীমা এক-দুটি ব্যাংকে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা সবগুলো ব্যাংককেই দেখব এবং কাজ করব। এজন্য একটি টাস্কফোর্স কাজ করবে। যেখানে আমাদের বাংলাদেশ থেকে কিছু অভিজ্ঞ লোক থাকবে, পাশাপাশি আমরা বিদেশ থেকেও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হায়ার করব। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আমাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

গভর্নর বলেন, আরেকটি টাস্কফোর্স বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করবে। আমরা যেভাবেই বলি, ব্যাংক খাতের দুর্বলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় দায় রয়েছে। ওই টাস্কফোর্স বাংলাদেশ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট, অপারেশন, রাজনৈতিক চাপ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করবে। এককথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করতে কাজ করবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, তৃতীয় টাস্কফোর্স হবে অ্যাটেস উত্তোলনের জন্য। অর্থাৎ খারাপ সম্পদ রিকভারির জন্য দুদক, সিআইডি, বিএফআইইউ ও আদালতসহ সব বিষয় সমন্বয় করবে। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু কিছু নীতি পরিবর্তন বা সহায়তার প্রয়োজন পড়বে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এই ৮টি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল। এর বাইরে ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংকের পর্যদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এনএফ/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়