ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

পুঁজিবাজার: আস্থা ফেরাতে বিনিয়োগকারীদের ২১ দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
পুঁজিবাজার: আস্থা ফেরাতে বিনিয়োগকারীদের ২১ দাবি

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও আস্থা ফেরাতে ২১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর ২১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক।

এ চিঠির অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার পতনের অন্যতম কারণ ছিল দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, কোম্পানিগুলোর অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ, দুর্বল করপোরেট গভর্নেন্স, কাঙ্খিত লভ্যাংশ প্রদান না করা, রিজার্ভে টাকা রেখে লুটপাট করা, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির বিডিংয়ে অনিয়ম। এছাড়া দুর্বল, ঋণগ্রস্ত, বন্ধ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, রাইট শেয়ার ইস্যু ও বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা। ২০১০ সালের ভয়াবহতম পতনের পরে বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য গত দুই মেয়াদে বিএসইসিতে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা বাজারকে আরও অস্থির ও অস্বাভাবিক করে তোলে। কারসাজি চক্র, ও লুন্ঠনকারীরা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়। দেশের অর্থনীতির প্রাণ ‘পুঁজিবাজার’ আজ গভীর সংকটে আবর্তিত। পুঁজিবাজারের বিগত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে অধিকাংশ স্টেক হোল্ডারদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা, ঢাকা-চট্টগ্রামে স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিবি, বিএসইসি এর বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট পুঁজিবাজার ধ্বংসের জন্য দায়ী। এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটের আদলে বা সমান্তরালে অনৈতিক প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, দুর্বল ও বন্ধ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা সর্বশান্ত হয়েছে। আপনার নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরতে শুরু করছে। বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।

পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সুপারিশগুলো হলো-
১. পুঁজিবাজার ধ্বংসের মূল নায়ক সালমান এফ রহমানসহ সব কারসাজি চক্র ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং তাদের লুন্ঠনকৃত ও বিদেশে প্রচারকৃত টাকা দেশে ফেরত এনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. খন্দকার ইব্রাহীম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পুনতদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৩. বিএসইসি কর্তৃক বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতার, হামলা, মামলা, গোয়েন্দা নজরদারি এবং মুচলেকা নেওয়াসহ সব রকমের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৪. বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ এর আওতাধীন বুক বিল্ডিং পদ্ধতি বাতিল করতে হবে এবং পূর্বের ন্যায় ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা অর্জন করা স্বত্ত্বেও উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসাবে প্রদানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

৭. পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে বহুজাতিক লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
৮. এসএমই মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে।
৯. বাইব্যাক আইন পাস করতে হবে।
১০. ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ওটিসি মার্কেট বন্ধ করে সেখানকার কোম্পানিসমূহকে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও মূল বাজারে ফিরিয়ে আনতে হবে।
১১. তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্স রেট কমাতে হবে।

১২. ২সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, তাদের শেয়ার ধারন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৩. ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে। ফ্লোর প্রাইজ ও ৩ শতাংশ সার্কিট বহালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কোডে প্রণোদনা স্বরূপ বিক্রিকৃত মূল্যের শেয়ার ক্রয় করে দিতে হবে।
১৪. প্লেসমেন্ট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
১৫. স্বল্পমূলধনী ও দুর্বল কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
১৬. পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জ, স্টক ডিলার, ইস্যুয়ার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অডিটর, অ্যাসেট ম্যানেজার, অ্যাসেটভ্যালুয়েশন কোম্পানিসহ সবাইকে আইন মেনে চলার নির্দেশ দিতে হবে।

১৭. আইসিবির জন্য একটি বিনিয়োগের গাইডলাইন থাকতে হবে।
১৮. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সকল মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।
১৯. পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলোকে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করতে হবে।
২০. স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে কোম্পানির সব ধরনের তথ্য হালনাগাদ থাকতে হবে।
২১. বিনিয়োগকারীদের ‘বিনিয়োগ নিরাপত্তা আইন’ অতিদ্রুত প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

/এনটি/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়