ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

আমানত শাহ সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ, শাস্তির দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৫:৪৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আমানত শাহ সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ, শাস্তির দাবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিজ ও প্রতিষ্ঠানটির ট্রেডার মো. ইমরান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন রিয়াজুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী। বিভিন্ন প্ররোচনায় ব্রোকারেজ হাউজটিতে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে পুঁজিবাজারে ৩৪ লাখ টাকার বিনিয়োগ করে সর্বশেষ এক লাখ টাকা ফেরত পেয়ে তিনি এখন সর্বশান্ত। অনুমোদন ছাড়াই ব্রোকারেজ হাউটির প্রতিনিধি ইমরান চৌধুরী নিয়মিত শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন রিয়াজুল ইসলাম।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি চেয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে চিঠি দিয়েছেন বিনিয়োগকারী রিয়াজুল ইসলাম।

চিঠিতে বিনিয়োগকারী রিয়াজুল ইসলাম জানান, আমি এই মর্মে অভিযোগ আরোপ করছি যে, মো. ইমরান চৌধুরী আমার পূর্ব পরিচিত। হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিতে ট্রেডার হিসেবে জব (চাকরি) করে বলে আমাকে জানায়। পূর্ব পরিচয়ের জেরে সে আমাকে স্টক মার্কেটে ইনভেস্ট করতে বলে এবং ৩০ পয়সা রেটে আমানত শাহ সিকিউরিটিতে বিও হিসাব কোড করে দেবে বলে জানায়। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে আমি আমানত শাহ সিকিউরিটিতে বিও কোড করি (বিও আইডি নম্বর: 1204570073745655) এবং ২৪ লাখ টাকা জমা দিই। প্রথম দুই তিনটা ট্রেড করার পর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভ আসে, সেখান থেকে সে ২ লাখ টাকা তুলে দিতে আমাকে চাপ দেয়। জবাবে বলি আমি যখন টাকা তুলব তখন সন্তুষ্ট হয়ে আপনাকে কিছু টাকা দেব, তাতে সে অসন্তুষ্ট হন। পরবর্তীতে আমি লক্ষ্য করি, সে আমার বিও কোডে এগ্রিসিভ ট্রেড করে এবং প্রতি তিন দিন অন্তর শেয়ার ক্রয় করে ও তা বিক্রি করে দেয়। এতে আমার কোডের টাকা দ্রুত কমে যেতে শুরু করে। এটা দেখে আমি আমি তাকে ট্রেড করতে নিষেধ করি এবং আমানত সাহা সিকিউরিটিতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। সেখানে ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সে অনেক ব্যস্ততা দেখায় এবং তিনি সেকেন্ড ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন। ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে আমার সমস্যার কথা জানাই এবং ইমরানকে আমার বিও কোডে অনুমতি ছাড়া কোনও ধরনের ট্রেড করতে নিষেধ করি। আমি তার কাছে আমার কোডের সমস্ত ট্রেডের সামারি (সারসংক্ষেপ) চাই, তখন সে জানায় তাদের আইটিতে সমস্যা থাকার কারণে সামারি বের করা যাচ্ছে না এবং ই-মেইল করা সম্ভব হচ্ছে না। পরবর্তীতে আমি ইমরানের সাথে আমার কোডের ব্যাপারে সাক্ষাতে কথা বলি এবং কীভাবে লস রিকোভার করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করি।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, সে আমাকে জানায়, আরও কিছু টাকা জমা দিলে সে কিছু গেমলার এবং আবুল খায়ের হিরুর (সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার) সাথে কথাবার্তা বলে কিছু শেয়ার কিনে দিলে দুই মাসের মধ্যে সব টাকা কাভার হয়ে যাবে এবং লাভ হবে। এমনকি, সে হিরুর সাথে তার ছবিও দেখান। তার পরামর্শমতো আমাকে না জানিয়ে ট্রেড করা যাবে না শর্তে আবার ১০ লাখ টাকা জমা দিই এবং নতুন কিছু শেয়ার ক্রয় করে রেখে দিতে বলি। পরবর্তীতে আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে ও বিভিন্ন সময়ে ব্যস্ত থাকি। ৫-৬ মাস পর আমার টাকার দরকার হলে আমার শেয়ার বিক্রি করতে চাই, তখন লক্ষ্য করি, বিভিন্ন শেয়ার বছরের সর্বোচ্চ দামে ক্রয় করে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করেছে এবং অতিরিক্ত কমিশনের নেশায় শেয়ার তিন দিন পর পর বাই সেল করেছে। আমি তার কাছে এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সে জবাব দেয়, এই সেল বাই তার বন্ধু করেছে। পরবর্তীতে অনেক রিকুয়েস্ট করে আমার সমস্ত শেয়ার সেল করে আমার টাকা দিয়ে দিতে বলি, তাতে সে আমাকে মাত্র এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেয়। পরে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, তারা উক্ত হাউজেরই নিয়োগকৃত সুবিধাভোগী দালাল চক্র যাদের ব্যবহার করে উক্ত হাউস তাদের নিজেদের ও তাদের বিশ্বস্ত কিছু স্টেক হোল্ডারদের শেয়ার উচ্চ দামে বিভিন্ন পার্টির কোডে ধরিয়ে দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ইমরান চৌধুরী গং ফেসবুকে ‘BD STOCK MARKET’ নামে গ্রুপের এডমিন। সে সেখানে বিভিন্ন লোভনীয় অফার এবং গুজব ছড়িয়ে নিজেদের ও হাউসের স্বার্থ হাসিল করে। তার কিছু প্রমাণ সংযুক্তি করা হলো। এমতাবস্থায় আমার আকুল আবেদন, এই হাউজ এবং তার দোসরদের তদন্তপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ বিষয়ে রিয়াজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সমস্ত অর্থ হারিয়ে আমি এখন পাগলপ্রায়। এখন আমার পরিবার অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিজ এবং প্রতিষ্ঠানটির ট্রেডার মো. ইমরান চৌধুরীকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মো. ইমরান চৌধুরীর মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করলে হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবস্থাপনা মো. আবুল হাসনাত রাইজিংবিডিকে বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্যই তিনি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

ঢাকা/এনটি/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়