ঢাকা     শনিবার   ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

পুঁজিবাজার: আস্থা বাড়াতে ১২ দাবি বিনিয়োগকারীদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
পুঁজিবাজার: আস্থা বাড়াতে ১২ দাবি বিনিয়োগকারীদের

পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বাংলাদেশ পুজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম।

আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি ও স্থায়ী গতিশীলতা আনা এবং চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের জন্য বর্তমান সময়ে কর্তৃপক্ষের করণীয় সম্পর্কে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি জানাচ্ছি।

আরো পড়ুন:

সংগঠনটির ১২ দফা দাবিগুলো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৮টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর কারণে শেয়ারধারীরা মূলধন হারাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি উক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে। কোম্পানি সম্পর্কিত নন-কমপ্ল্যায়েন্সের জন্য পরিচালকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে কমপ্ল্যায়েন্স ঠিক করতে হবে। একইসঙ্গে ডিভিডেন্ট বিতরণের অনিয়ম দূর হবে।

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারদের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করে পারস্পরিক অনাস্থা দূর করে বিনিয়োগকারীদেরকে আস্থায় নেওয়ার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যাথায় ধারাবাহিক মার্কেট পতন ও অযোগ্যতার দায়ভার নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা, ছাত্র-জনতার সরকারকে বেকাদায় ফেলতে এবং পুঁজিবাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি করে, স্বার্থ হাসিলে বিগত বিএসইসির ‘জেড’ ক্যাটাগরি সংক্রান্ত উদ্যোগ বর্তমান সময়ে বাস্তবায়নে কারো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজির নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশে ‘পুঁজি বিনিয়োগ আইন’ প্রণয়নও কার্যকর করতে হবে। প্রকৃত লভ্যাংশ না পেলে এবং কোম্পানিগুলো প্রতারণার আশ্রয় নিলে যাতে বিনিয়োগকারীরা আইনি সুযোগ নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিএসইসিকে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা বাড়াতে আইনের সময়োপযোগী সংশোধন করতে হবে।

আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, বিগত ১৫ বছর কারসাজির কারণে সৃষ্ট পতনে সর্বস্ব হারিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা ও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, সেসব বিনিয়োগকারীদের পরিবার থেকে ১ জনকে চাকরির সুব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

২০১০ সালের ধসের পর থেকে আজ অবধি পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ পুঁজির যোগান দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

চিহ্নিত কারসাজীকারকদের কারণে ২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে বিগত সরকারের হামলা-মামলার রোষানলে পড়ে নিরীহ বিনিয়োগকারীরা। চরম আর্থিক সংকট, পারিবারিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। যার খবর কেউ রাখেনি। সুতরাং সব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা নিঃশর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে যত টাকা খরচ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য না দেওয়া, প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করা, কোম্পানির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে কথা বলার সুযোগ না দেওয়া এবং দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে এজিএম সম্পন্ন করে কোম্পানির এজেন্ডা পাশ করানোর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থার নামে চাঁদা আদায়, এজিএমকে ঘিরে চলমান অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধান করে প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অবিলম্বে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

পুঁজিবাজারের বর্তমান সংকটকালে ব্যাংকগুলোকে সংকট উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে, কারণ রাইট শেয়ার ছেড়ে সুবিধামতো সময়ে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। তাই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নিশ্চিত করার কার্যকর ভূমিকা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, সবকিছু শুধু আইন দিয়েই হয় না, মানবিক বিষয়টি অনেক সময় আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যায়। কারণ আইন যেহেতু মানুষের জন্যই। বর্তমান ধারাবাহিক দরপতনে বিনিযোগকারীরা নিঃস্ব। সুতরাং মানবিক কারণে ফোর্সসেল আপাতত বন্ধ রাখার আকুল আবেদন জানাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারকে অব্যাহতভাবে গতিশীল রাখার স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় করতে উদ্যোগ গ্রহণ করলে ইক্যুইটি মাইনাস অ্যাকাউন্টগুলো দ্রুত লেনদেনের আওতায় আসবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামোয় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজগুলোকে তহবিল বৃদ্ধির জন্য তাদের কে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অর্থ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে বিএসইসির মনোযোগ আকর্ষণ করছি।

অতিদ্রুত বাইব্যাক আইন প্রণয়ন করতে হবে। কারণ সেকেন্ডারি মার্কেটে মৌলভিত্তি সম্পন্ন অনেক শেয়ারের মূল্য ফেসভ্যালুর কাছাকাছি। এমতাবস্থায় প্রিমিয়ামসহ ইস্যু মূল্যের নিচে শেয়ার দর নামলে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা মালিকদেরকে তা বাইব্যাক করতে হবে ।

আইনি নির্দেশনা থাকা সত্বেও ইস্যু ম্যানেজাররা মৌলভিত্তি সম্পন্ন ইস্যু না এনে, নাম সর্বস্ব কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে অধিক প্রিমিয়ামসহ আইপিওএর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করার পর আর কোনো দায়বদ্ধতা নিতে চায় না। অথচ তালিকাভুক্তির ৩ বা ৬ মাসের মাথায় অনেক কোম্পানি বিভিন্ন অজুহাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থবছরের পর বছর আটকে যায়। এজন্য দায়ী ইস্যু ম্যানেজারদের চিহ্নিত করে জরিমানা আদায় পূর্বক লাইসেন্স বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন কোম্পানির সেকেন্ডারি মার্কেটে তালিকাভুক্তির পর তাদের সার্বিক কার্যক্রম সঠিক মনিটরিংএর আওতায় আনতে হবে।

‘পুঁজিবাজার বিষয়ক তথ্য ব্যাংক’ গঠন করে বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব তথ্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংগ্রহ করার সহজ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিএসসিইকে ডিএসই ও সিএসই সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

/এনটি/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়