ঢাকা     বুধবার   ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ১৪ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে বসবে বিএসইসি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৩০ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ০৯:৫৮, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
পুঁজিবাজারে নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে বসবে বিএসইসি

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে তিনটি বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। এগুলো হলো- বিনিয়োগকারীর সুবিধা, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সমস্যার সমাধান ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পুঁজিবাজারের বিষয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব সহায়তার আওতাভুক্ত হবেন ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাসেদ মাকসুদ এসব কথা বলেন।

সভায় চেয়ারম্যান খন্দকার রাসেদ মাকসুদের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

সভায় খন্দকার রাসেদ মাকসুদ বলেন, অর্থ উপদেষ্টা দেশে ফিরেছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। যেসব নীতি পদক্ষেপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার করহার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয়ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা, সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু কারণে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারের উন্নয়নে তিনটি বিষয় মাথায় রেখে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। এগুলো হলো বিনিয়োগকারীর সুবিধা, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সমস্যার সমাধান ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়াতে কর সুবিধা দেওয়া এবং ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী করতে কর প্রণোদনা বৃদ্ধি করা দরকার। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেটি কীভাবে ও কাদের দেওয়া হবে। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। আইসিবিকে তহবিল সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া শেয়ার পুনঃক্রয়ের বিষয়ে কী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তা নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, গত দুই মাসে আমরা বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে অনেক আলোচনা করেছি। এসব আলোচনায় বাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা উঠে এসেছে, সেগুলো সমাধানে কাজ করছে কমিশন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে ভালো কিছু পাবেন বলে আমরা তাঁদের আশ্বস্ত করছি। বর্তমানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কাজ চলছে। তারই অংশ হিসেবে পুঁজিবাজারেও স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে নানা সংস্কার বাস্তবায়ন হবে, যার সুফল বিনিয়োগকারীরা পাবেন। বর্তমান কমিশন সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গঠনে বদ্ধপরিকর।

খন্দকার রাসেদ মাকসুদ আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারের দামে সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে গেছেন। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিমুখ হয়ে গেছেন। আবার উচ্চ করহারের কারণে সম্পদশালী ব্যক্তিরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে উচ্চ সুদ পাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। তাই শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে আরও বেশি সক্রিয় করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

মতবিনিময়কালে শেয়ারবাজার বিষয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা নিজেদের কর্ম অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও সুপারিশ তুলে ধরেন। কমিশনের পক্ষ থেকে এসব সুপারিশ লিপিবদ্ধ করা হয়।

সাংবাদিকদের বক্তব্যের পর কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজারে প্রান্তিক ঋণ ও নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যার সমাধানে কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কমিশন প্রতিদিনের বাজারের উত্থান-পতনে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তবে বাজারে যাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে, সে জন্য আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকবে। কমিশন আরও জানায়, ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে এরই মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। বহুজাতিক, সরকারি-বেসরকারি ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে কমিশন কাজ করছে। পাশাপাশি তথ্য সরবরাহপ্রক্রিয়া সহজ করতে ডিজিটালাইজেশনের ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

মতবিনিময়কালে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত কমিশনগুলোর সময় ঘটা নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তের পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে ২৭৬টি তদন্ত অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়ে গেছে। শেয়ারবাজারের তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনার বিষয়টি কমিশনের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানানো হয়।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়